দুর্বল ৫ ইসলামী ব্যাংক মিলে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত নতুন ইসলামী ব্যাংক

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সরকার মালিকানাধীন একটি নতুন ইসলামী ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের পাঁচটি দুর্বল শরিয়াহ্ভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক—এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক—একীভূত করে নতুন এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠন করা হবে। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
নতুন ব্যাংক গঠনের জন্য সরকার ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন সরবরাহ করবে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা জাতীয় বাজেট থেকে এবং বাকি ২০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে আসবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত বীমা তহবিল থেকে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের ১০ শতাংশ শেয়ারে রূপান্তর করে আরও ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠনের রূপরেখা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণে আপত্তি জানায়, তবে তাদের পুঁজির ঘাটতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত সহায়তা চাওয়ার কারণে তাদেরও একীভূতকরণের আওতায় আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহম্মদের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার কাজ হবে সময়ভিত্তিক কর্মকৌশল প্রণয়ন। সরকার চায় আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে একীভূতকরণের প্রাথমিক কাজ শেষ করতে।
নতুন গঠিত ব্যাংকটি প্রথম তিন থেকে পাঁচ বছর রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত হবে। এরপর আন্তর্জাতিক কোনো বহুজাতিক সংস্থার কাছে ব্যাংকটি বিক্রি করে সরকারের মূলধন ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিচালনার জন্য ইসলামী ব্যাংকিং, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও আইন বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।
একীভূত ব্যাংকে একই এলাকায় একাধিক শাখা থাকায় কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হলেও, সরকারের পক্ষ থেকে গণহারে ছাঁটাই না করে নতুন শাখা খোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত আমানত স্থানীয় পর্যায়েই বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, ফার্স্ট সিকিউরিটির ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, এসআইবিএলের ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ।
দুর্বল অবস্থার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে কয়েকটি ব্যাংক ইতিমধ্যে বিশেষ সহায়তা হিসেবে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে। এক্সিম ব্যাংক পেয়েছে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭ হাজার ৫০ কোটি, এসআইবিএল ৬ হাজার ৬৭৫ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ২ হাজার ২৯৫ কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
পরবর্তী ধাপে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও পুনরুদ্ধার তহবিল হিসেবে অর্থ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
১২১ বার পড়া হয়েছে