প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, প্রবীণ রাজনীতিক ও লেখক বদরুদ্দীন উমর আর নেই

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “আজ সকালে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাসা থেকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।”

বদরুদ্দীন উমর ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

উমর পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ২০০৩ সালে তিনি ‘জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল’ গঠন করে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব নেন।

তাঁর লেখা বইগুলো—বিশেষত ষাটের দশকে প্রকাশিত ‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭) ও ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯)—জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বিষয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এসব বইয়ে তিনি ধর্ম ও রাজনীতির সংঘাত, উপনিবেশিক উত্তরাধিকার এবং জাতিগত বিভাজন নিয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবুল হাশিম ছিলেন মুসলিম লীগের একজন বিশিষ্ট নেতা এবং উপমহাদেশের মুসলিম জাতীয়তাবাদের অন্যতম মুখ। পারিবারিক পরিবেশেই তিনি রাজনৈতিক ও সমাজ বিশ্লেষণের ধারায় প্রবেশ করেন।

চলতি বছরের ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও রক্তচাপজনিত সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন উমর। ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি বাসায় ফেরেন। বয়সজনিত অসুস্থতা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত তিনি লেখালেখি ও চিন্তাচর্চা চালিয়ে যান।

২০২৫ সালে সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ ভূষিত করে। তবে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হলো। তিনি ছিলেন মুক্তচিন্তার, ধর্মনিরপেক্ষতার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এক সাহসী কণ্ঠস্বর।