বাবাকে মনে পড়লো...

শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৬:১৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
কল্লোলের অফিসে রেডিওটা দেখলাম। ও দৈনিক নয়া শতাব্দির এডিটর। নিকুঞ্জে মারকাট অফিস। ওকে জিজ্ঞেস করলাম রেডিওটা মারফি কি-না। ছেলেবেলায় আমাদের ছিল ৬ ব্যান্ডের ফিলিপস্।
ধরুন বাবা সাতসাকালে যে গানটি শোনা শুরু করেছেন পথে যেতে সেই গানটিই শুনছি টুনুদের বাড়ির রেডিওতে। তারপরের দু'লাইন শুনি মার্শালদের রেডিওতে। তারপর নাইডুদের বাড়ি থেকে। আমাদের বাবারা সবাই সকালে "শ্রীলংকা বিদেশ বিভাগকি বিনাকা গীতমালা শুনতে থে।"
গানগুলো শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল- পেয়ার কি বাহার লেকে/দিলকা কারার লেকে /আজারে আজা পারদেশিয়া...
বাহারো ফুল বারসাও মেরি মেহেবুব আয়া হ্যায়ে...
মোহাম্মদ রফি সাহেবের এই গানটি শুনলে দাঁড়াতাম। কোন মুগ্ধতায় যেন পা চলতো না। তখন মহল্লার সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি কল্পনায় চলে আসতো। বসন্তের সব ফুল যেন ঝরে পড়ছে তার আসার পথে...
শুধু ১৯৭১ সালে আর কোন বাড়ি থেকে গান ভেসে আসে নি। বাবাদের মনে তখন বাজতো জটিলেশ্বরের ঐ গানের মতো হয়তো কিছু, একোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার / একি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা একি পাখির কূজন নাকি হাহাকার...
একাত্তরে আমার বাবাকে গুলি করেছিল। তাই আমরা আমাদের রাস্তার ওপর বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম নাইডুদের বাসায়। ওদের রেডিওটা তখন দেখতে পেয়েছিলাম। ওটা ছিল মারফি। সেটা অবিকল ছবির এই রেডিওটার মতো। এটা মনে হয় কল্লোলের বাবার রেডিও। আমাদেরটা লুট হয়ে গেছে একাত্তরে। আমার বাবা নেই। রেডিওটা নেই। তাঁর অন্য কোনো শখের কথা আমার জানা নেই। তাই এটা দেখে বাবাকে মনে পড়লো।
লেখক: একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও নাট্যকার
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
১৭৪ বার পড়া হয়েছে