সর্বশেষ

সারাদেশ

রাজবাড়ীতে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করা ব্যক্তির মরদেহে আগুন

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ী প্রতিনিধি

শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৩:০৬ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র কবর থেকে মরদেহ তুলে তা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় ধর্মীয় ‘তৌহিদি জনতা’।

এর আগে তার দরবার শরিফে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ সময় অন্তত ৫০ জন আহত হন।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়া এলাকায় এই সহিংস ঘটনা ঘটে। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

কবর ঘিরে উত্তেজনার সূত্রপাত
সম্প্রতি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান নুরুল হক। পরে তাকে গোয়ালন্দ দরবার শরিফ এলাকায় একটি বেদির উপর দাফন করা হয়, যা কাবা শরিফের আদলে রং করা ছিল এবং সাধারণ কবরের চেয়ে অনেক উঁচু ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়টি ঘিরে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ধর্মপ্রাণ জনগণ এটি শরিয়তবিরোধী বলে দাবি করে এবং কবর নিচু করার, রং মুছে ফেলার ও সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

সঙ্কট নিরসনে প্রশাসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষকে নিয়ে একাধিক বৈঠক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রশাসন গঠন করেছিল একটি সমঝোতা কমিটিও। নুরুল হকের পরিবার প্রশাসনের অনুরোধে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চেয়ে নেয়। কিন্তু তার আগেই শুক্রবার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।

সহিংস বিক্ষোভ ও মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া
শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাব এলাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা তৌহিদি জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর তারা নুরুল হকের দরবারে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালান। এক পর্যায়ে তারা তার কবর থেকে মরদেহ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মা মোড়ে নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়িতেও হামলা হয়। ইউএনও ও পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনী ও র‍্যাব হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জনতার বক্তব্য
তৌহিদি জনতার একজন সদস্য মো. আল আমিন বলেন, “নুরুল হক নিজেকে ইমাম মাহাদি এবং এমনকি খোদা দাবি করেছিলেন। তার কর্মকাণ্ড শরিয়তবিরোধী ছিল। এজন্য আমরা তার দরবার ভেঙে দিয়েছি এবং লাশ পুড়িয়ে ফেলেছি।”

আরেকজন বিক্ষোভকারী কামরুল ইসলাম বলেন, “লাশ না পুড়ালে তার ভক্তরা আবারও ভণ্ডামি শুরু করত। তাই আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি।”

পরিবারের দাবি ও প্রতিক্রিয়া
ঘটনার আগের দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন নুরুল হকের ছেলে মেহেদী নূর জিলানী। তিনি জানান, তার বাবা কখনো নিজেকে খোদা দাবি করেননি, বরং ইমাম মাহাদির দ্বীন প্রচারক ছিলেন। দাফনের সময় ইসলামী বিধান মেনেই বেদি তৈরি করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। “১২ ফুট উঁচু কবর নয়, বরং তা তিন থেকে চার ফুট উঁচু হবে,” বলেন মেহেদী।

তবে শুক্রবারের সহিংস ঘটনার পর নুরুল হকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রশাসনের অবস্থান
গোয়ালন্দের ইউএনও নাহিদুর রহমান বলেন, “ঘটনার সময় পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ছিল। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এখন এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।”

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানান, “তৌহিদি জনতার একাংশ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এরপর তারা দরবারে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।”

পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত
এখনও গোয়ালন্দে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসন বলছে, পরবর্তী সহিংসতা ঠেকাতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।

১১৬ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন