পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’: আন্দোলনের অধ্যায়

বৃহস্পতিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জাতির ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহ—২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান—এবার বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় হিসেবে জায়গা পাচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ধাপে ধাপে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে এই সমকালীন গণআন্দোলনের বিস্তৃত বিবরণ।
এরই মধ্যে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এই আন্দোলন সীমিত পরিসরে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এবার বিষয়টি আরও বিস্তারিত আকারে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আন্দোলনের ধারা, তরুণদের অংশগ্রহণ ও পরবর্তী প্রভাবসহ উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রত্যেক শ্রেণিতে বয়স অনুযায়ী উপস্থাপন
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে পাঠ্য বিষয়টি থাকবে গভীরতা ও ভাষাগত সরলতার ভারসাম্য রেখে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে এটি থাকছে “স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান” নামে দ্বিতীয় অধ্যায়ে, সপ্তম শ্রেণিতে “বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও গণআন্দোলন” অংশে এবং অষ্টম শ্রেণিতে “গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যুত্থান” নামে তৃতীয় অধ্যায়ে।
নবম-দশম শ্রেণিতে এটি আরও গভীরভাবে উপস্থাপন করা হবে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ এবং ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ে। সেখানে আন্দোলনের পটভূমি, সহিংসতা, নিহতদের স্মৃতি, এবং রাজনৈতিক পরিণতি বিস্তারিতভাবে স্থান পাবে।
উচ্চমাধ্যমিকে বিশ্লেষণধর্মী পাঠ
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান যুক্ত হবে বিশ্লেষণধর্মী পাঠ হিসেবে। এর মধ্যে ‘সাহিত্যপাঠ’ বইয়ে একটি প্রবন্ধ আকারে তুলে ধরা হবে আন্দোলনের মানবিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। অন্যদিকে ‘English for Today’ বইয়ে এটি থাকবে একটি সমকালীন ইংরেজি প্রবন্ধ হিসেবে।
পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নব্বইয়ের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতা-পরবর্তী অন্যান্য গণঅভ্যুত্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণও শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। এনসিটিবির মতে, এতে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে এবং ঘটনাগুলো আর বিচ্ছিন্নভাবে নয়, বরং একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উপস্থাপিত হবে।
‘তরুণদের আত্মত্যাগে গড়ে ওঠা ইতিহাস’ — এনসিটিবি চেয়ারম্যান
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তেমনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানও গণতন্ত্র ও বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” তিনি আরও জানান, আন্দোলনে তরুণদের সাহসী অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগ ভবিষ্যতের বাংলাদেশের চিত্র গড়তে ভূমিকা রাখবে।
“আমরা চাই শিক্ষার্থীরা শুধু ইতিহাসই না, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নাগরিক দায়িত্ববোধ নিয়েও ভাবুক,”— বলেন তিনি।
সমর্থন জানালেন আন্দোলনের সমন্বয়করা
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মো. আব্দুল মুনঈম বলেন,
“পলাশীর যুদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের গণআন্দোলন পর্যন্ত—সবই আমাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। এখন জুলাই অভ্যুত্থান যুক্ত হওয়ায় সেই ইতিহাস আরও পূর্ণতা পাচ্ছে।”
আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম বলেন,
“জুলাই অভ্যুত্থান শুধুমাত্র সরকারের পতন নয়, বরং তরুণদের নেতৃত্বে এক নতুন ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা। এটি ইতিহাসচর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।” তবে তিনি মনে করেন, পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তি যথেষ্ট নয়।
“এ নিয়ে গবেষণা, নাটক, প্রামাণ্যচিত্র এবং শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে—যাতে ইতিহাস শুধু পঠিত না হয়ে অনূভূত হয়,”— যোগ করেন মুঈনুল।
জাতীয় পাঠ্যক্রমে নতুন দিগন্ত
জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসি) ও এনসিটিবির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা এই পাঠ্যবিষয়টি এখনো কিছু শ্রেণিতে প্রাথমিক পর্যায়ে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, এই সংযোজন দেশপ্রেম, নাগরিক চেতনা ও গণতান্ত্রিক আদর্শ বিকাশে বড় ভূমিকা রাখবে।
১৭৬ বার পড়া হয়েছে