পাকিস্তানে আলাদা তিন হামলায় নিহত ২২, সহিংসতা চরমে

বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৩:২৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পৃথক তিনটি সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন।
বেলুচিস্তানের কোয়েটায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১ জন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কোয়েটার একটি রাজনৈতিক সমাবেশ শেষে পার্কিং এলাকায় বিস্ফোরণটি ঘটে। সরকারি কর্মকর্তা হামজা শফাৎ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, “সমাবেশ শেষে যখন মানুষজন বের হচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ করে পার্কিং লটে বিস্ফোরণ ঘটে।” এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
এরই মধ্যে বেলুচিস্তানের ওয়াশুক জেলায় সেনাবাহিনীর ওপর জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯ সদস্য। নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে জানায়, একদল জঙ্গি স্থানীয় একটি থানা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী হামলার পরপরই অভিযানে নামে এবং চার দিনের সামরিক অভিযানে প্রায় ৫০ জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর জানিয়েছে, ১০ আগস্ট রাতে বেলুচিস্তানের ঝোব জেলায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী সামবাজা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেনারা তিন জঙ্গিকে হত্যা করে। সামগ্রিকভাবে গত চার দিনে মোট ৫০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়। অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
আইএসপিআর এ হামলাকারীদের ‘খাওয়ারিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে—যা সাধারণত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সদস্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এক বিবৃতিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, “পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সীমান্ত রক্ষায় ও জাতীয় স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করার সকল প্রচেষ্টা রুখে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
২০২২ সালের নভেম্বরে টিটিপির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে সহিংসতা ক্রমশ বেড়েছে। বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা বাড়ার পাশাপাশি খাইবার পাখতুনখোয়ায় টিটিপি নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, ভারত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং আফগানিস্তান তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিচ্ছে। তবে নয়াদিল্লি ও কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত তীব্রতায় রূপ নেয়। উভয় দেশ চার দিন ধরে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, যুদ্ধবিমান ও গোলাবর্ষণে অংশ নেয়, যার ফলে অন্তত ৭০ জন প্রাণ হারায়। এর আগে ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়, যার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে, ১০ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে আন্তর্জাতিক মহল সতর্ক করে বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
১২৭ বার পড়া হয়েছে