আজকের বেইজিং সামরিক কুচকাওয়াজ: কূটনৈতিক বার্তা ও ভবিষ্যৎ ঘোষণা

বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:১৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বেইজিংয়ে বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজ ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন চীন তার বিশ্ব ব্যবস্থার নতুন ভিশন, শক্তি ও নেতৃত্ব প্রদর্শনের এক ঐতিহাসিক মঞ্চ।
এই গবেষণামূলক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে—কে এসেছেন, কে আসেননি, কেন আসেননি, এবং এই কুচকাওয়াজের কূটনৈতিক বার্তা ও ভবিষ্যৎ ঘোষণার সম্ভাবনা।
কোন কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত
চীন এ বছর ২৬টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই সরাসরি উপস্থিত রয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন; চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (আয়োজক), রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট উখনাাগিন খুরেলসুখ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, মিয়ানমারের সামরিক নেতা মিন অং হ্লাইং, কঙ্গো (রিপাবলিক অফ)এর প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসু এনগেসো, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো (একমাত্র নেটো সদস্য) এবং কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান সহ মধ্য এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রপ্রধানরা।
আরও কয়েকটি আফ্রিকান, মধ্য এশীয় ও এশীয় দেশের শীর্ষ নেতা সরাসরি উপস্থিত রয়েছেন, যদিও সকলের নাম এখনো জানা যায়নি।
ভারত, পশ্চিমা ও ন্যাটো রাষ্ট্রপ্রধানরা অনুপস্থিত কেন?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ ভারতের সরকারি প্রতিনিধি উপস্থিত নেই। ভারত চায় না, চীন-জাপান সম্পর্ক বা এসসিও-ন্যাটো জটিলতার মাঝে নিজেকে বিতর্কে ফেলতে। ভারতের কাছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত, তাই চীনের নেতৃত্বাধীন কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া হবে জটিল বার্তা পাঠানো।
পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া—এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধান পাঠাচ্ছেন না। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বে চীনের ঘনিষ্ঠ জোট-নির্ভর অনুষ্ঠান এবং সাম্প্রতিক সামরিক সহযোগিতা অনেকের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক জোট রাজনীতিও বড় কারিগরি।
চীনের আমন্ত্রণ, অংশগ্রহণ ও অনুপস্থিতি
চীন ৪০টিরও বেশি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যারা সরাসরি এসেছেন সেই তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মঙ্গোলিয়া, কঙ্গো, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, মধ্য এশিয়ার দেশগুলো, কিছু আফ্রিকান দেশ।
অনেক দেশ রাষ্ট্রপ্রধানের পরিবর্তে নিম্নতর পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে—বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, মালদ্বীপ, নেপাল, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইজিপ্ট.
অনেকে যেমন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পশ্চিম ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া, তুর্কি এসব দেশ কোনো শীর্ষ প্রতিনিধি পাঠায়নি।
অনুষ্ঠানের সম্ভব্য ঘোষণা ও বার্তা
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে নতুন “সমান্তরাল বৈশ্বিক ব্যবস্থা”র বার্তা।
চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া-ইরান জোটের সামরিক সহযোগিতা। বিশেষ করে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুষ্ঠানে ঘোষিত হতে পারে।
নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, স্টেলথ প্রযুক্তি নিয়ে আত্মনির্ভরতা ও পরাশক্তি চীন হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণার লক্ষ্যে উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তির প্রদর্শন।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা দাবিতে সাউথ চীন সাগর, তাইওয়ান, সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা।
বিশ্লেষণ
এই সামরিক কুচকাওয়াজ কার্যত চীন নেতৃত্বাধীন নতুন এক অক্ষ―চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইরান―আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভারসাম্যে নিজেদের অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেয়নি, কারণ তারা চায় না সামরিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ বা রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের সঙ্গে কৌশলগত ভুল বার্তা দিতে।
ভারত তার অংশীদারিত্বের স্বার্থ ও কূটনীতির সংবেদনশীলতা বজায় রাখার জন্য অনুষ্ঠান এড়িয়ে গেছে; অন্য শীর্ষ পশ্চিমা দেশগুলোও সেভাবেই নিজেদের নিরাপদ দুরত্বে রেখেছে।
অনুষ্ঠান থেকে চীন নেতৃত্বাধীন নতুন জোট ও নিরাপত্তা কাঠামোর দিকনির্দেশনা, কৌশলগত চুক্তি এবং সামরিক আধুনিকায়নের ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৯৯ বার পড়া হয়েছে