নিষেধাজ্ঞা শেষে খুললো সুন্দরবন, বনজীবীদের মনে জলদস্যুর আতঙ্ক

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৭:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন।
জীবিকার তাগিদে আবারও কাঁকড়া, মাছ ও মধু আহরণে বনে প্রবেশ করছেন জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা। একইসঙ্গে পর্যটকদের জন্যও উন্মুক্ত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি। তবে নতুন মৌসুম শুরুর আগমুহূর্তে বনজীবীদের মধ্যে আবারও দেখা দিয়েছে পুরনো আতঙ্ক—জলদস্যুদের উৎপাত।
প্রজনন মৌসুমে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিবছরের মতো এবারও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সকল প্রকার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এ সময় কাঁকড়া, মাছ ও মৌমাছির নির্বিঘ্ন প্রজননের জন্য জেলেদের বনভূমিতে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়।
নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে ইতোমধ্যে ২,৯৭০টি পাসপারমিট নবায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক। তিনি বলেন, “জেলে-বাওয়ালি ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ টহল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সবাইকে নিয়ম মেনে পাস ও পরিচয়পত্র দিয়ে বনে প্রবেশ করতে হবে।”
বনবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, কাঁকড়া আহরণে প্রতিটি বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেটে (বিএলসি) সর্বোচ্চ ৩ জন, মাছ আহরণের ক্ষেত্রে ৫ জন এবং মধু সংগ্রহের জন্য সর্বোচ্চ ৭ জন প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘোষণা সত্ত্বেও স্থানীয় জেলেদের মধ্যে এখনও শঙ্কা কাটেনি। মুন্সিগঞ্জ এলাকার জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, “তিন মাস কাজ না থাকায় অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। বাচ্চাদের স্কুল ফি দিতে পারিনি। সরকারের কাছে অনুরোধ, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা যদি এক মাসে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে আমরা একটু স্বস্তিতে থাকতে পারি।”
বুড়িগোয়ালিনী এলাকার জেলে রহিম মোল্লা বলেন, “বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে ছিলাম। এখন বনে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে স্বস্তি ফিরলেও, জলদস্যুদের তৎপরতায় আবারও আতঙ্কে আছি।”
অন্যদিকে, বনাঞ্চল উন্মুক্ত হওয়ার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। তারা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়টিতে পর্যটক না থাকায় তাদের আয়-রোজগার একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সরকারি সহায়তা না থাকায় চরম অর্থকষ্টে পড়তে হয়েছে তাদের।
স্থানীয়দের মতে, বনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কার্যকর নজরদারির ব্যবস্থা থাকলে একদিকে যেমন জীবিকা নির্ভর জনগোষ্ঠী স্বস্তিতে থাকবে, তেমনি সুন্দরবনের পর্যটন খাতও আরও সমৃদ্ধ হবে।
১৪২ বার পড়া হয়েছে