বাকৃবি শিক্ষার্থীদের আজও রেল অবরোধ, অচল ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৭:২২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ছয় দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহের রেল যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় এলাকায় রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের সব ট্রেন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রতিনিধি, পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এএইচ এম হিমেল জানান, “সোমবার ৬ দফা দাবি দিয়ে আমরা প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া না পেয়ে বাধ্য হয়ে রেল অবরোধে নেমেছি। প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে আশ্বস্ত করলে আমরা অবরোধ তুলে নেব।”
আরেক শিক্ষার্থী ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, “দাবি আদায়ের আন্দোলন করাই বাংলাদেশের প্রচলিত কালচার হয়ে গেছে। কিন্তু সেই আন্দোলনে বহিরাগতদের দিয়ে হামলা করানো অগ্রহণযোগ্য। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।”
প্রায় এক মাস ধরে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের ডিগ্রি একীভূত করে একটি কম্বাইন্ড ডিগ্রি প্রদানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।
দুপুর ১টার দিকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে মিলনায়তনের গেটে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম ও পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন।
সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্যের বাসভবনের পাশ থেকে প্রায় ২৫০-৩০০ জন বহিরাগত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং তালা ভেঙে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বেরিয়ে যান। এ ঘটনায় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
এই সহিংসতার জেরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার নির্দেশ অমান্য করে সোমবার সকালেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে জড়ো হন এবং ‘কে আর’ মার্কেট এলাকায় ছয় দফা দাবিসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে এককভাবে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। একাডেমিক কাউন্সিল সভায় একটা সমঝোতার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বিষয়টি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, জেলা প্রশাসক যেটা ভালো মনে করবেন, সেটিই করা হবে।”
অন্যদিকে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই দেখবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই।”
১২৭ বার পড়া হয়েছে