পুলিশে প্রথমবারের মতো সরাসরি এএসআই নিয়োগের উদ্যোগ

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৬:৩০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চার হাজার নতুন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই-নিরস্ত্র) পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে দুই হাজার এএসআই নিয়োগ দেওয়া হবে সরাসরি, বাকিদের পদোন্নতির মাধ্যমে।
এই পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে এইচএসসি পাস।
জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব উঠবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে এ পদ সৃষ্টির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। অর্থ বিভাগের অনুমোদনও মিলেছে চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে এবং পুলিশ সদরদপ্তর থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অনলাইন জিডি, মামলা দায়ের ও তদন্ত প্রক্রিয়া সহজ করতে এই নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। লক্ষ্য হচ্ছে—সেবা প্রত্যাশীরা থানায় না গিয়ে অনলাইনে জিডি বা মামলা দায়ের করতে পারবেন। যদিও এই কার্যক্রম এখনো পরীক্ষামূলকভাবে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চালু রয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন এএসআই পদের কারণে বছরে অতিরিক্ত ১৩৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হবে সরকারকে। শুরুতে আট হাজার এএসআই পদের প্রস্তাব দেওয়া হলেও ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগ তা কমিয়ে চার হাজারে সীমাবদ্ধ রাখে।
বর্তমানে এএসআই (নিরস্ত্র) পদের সংখ্যা ১৮,৭৩৮টি। নতুন চার হাজার পদ যুক্ত হলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২২,৭৩৮। অথচ এসআই পদের সংখ্যা ২১,০৯৮টি থাকায় এএসআই থেকে এসআই পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে একজন এএসআই চার বছর পর এবং কনস্টেবল ছয় বছর পর পদোন্নতি পান। নতুন এএসআই নিয়োগের ফলে সেই সুযোগ কমে যেতে পারে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, "এএসআই পদে নিয়োগে কম্পিউটার দক্ষতা বাধ্যতামূলক করা উচিত। কারণ অনলাইন জিডি ও তদন্ত কার্যক্রমে দক্ষতা না থাকলে এই নিয়োগ কার্যকর হবে না।"
তিনি আরও বলেন, "যদি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাহলে পুলিশের সার্ভিস মানে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে কনস্টেবল, এএসআই ও এসআই—এই তিন স্তরের জন্য একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।"
এটি হবে বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি এএসআই নিয়োগ। এ জন্য বিদ্যমান নিয়োগবিধি সংশোধনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি কাজী জিয়া উদ্দিন জানান, প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, "পুলিশ স্টেশনের ধরনের ওপর নির্ভর করে একজন এসআই ও এএসআই-এর অধীনে কতজন কনস্টেবল থাকবেন। এ বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকা দরকার, যাতে দায়িত্ব বণ্টনে স্বচ্ছতা থাকে।"
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এএসআই ও কনস্টেবল মত দিয়েছেন, শুধু এএসআই পদের সংখ্যা বাড়ালেই হবে না—একই সঙ্গে এসআই পদও বাড়ানো জরুরি, না হলে পদোন্নতির ক্ষেত্রে হতাশা তৈরি হবে।
১৬১ বার পড়া হয়েছে