সর্বশেষ

রাজনীতি

দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে ৪৭ বছরে বিএনপি: সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে পেরিয়ে এসেছে ৪৭টি বছর। আজ ১ সেপ্টেম্বর দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সাত দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি।

১৯৭৮ সালের এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯৮১ সালে জিয়ার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসে দলের হাল ধরেন এবং দলটিকে তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যান। তবে ২০০৬ সালের পর থেকে আর ক্ষমতায় যেতে পারেনি বিএনপি। ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানালেও তা আদায় হয়নি।

বিগত কয়েক মাসে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পরিবর্তন এসেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ঘটনাকে বিএনপি তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের সাফল্য হিসেবে দাবি করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকায় বিএনপির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—সাংগঠনিক ঐক্য, জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই, সঠিক কৌশল নির্ধারণ এবং গণভিত্তি পুনর্গঠন।

নেতৃত্বে পরিবর্তন, নেতৃত্বে তারেক রহমান
দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়। বিদেশে অবস্থানরত তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত হয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধার ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে অনেক
বিএনপি শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকেও আন্দোলন, মামলা, হামলা ও নির্যাতনের মুখে সংগঠন টিকে আছে নেতাকর্মীদের মনোবল এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থার কারণেই। তবে তারা স্বীকার করেন—দলের সামনে এখন নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে—

সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা
চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই ও আসন ভাগাভাগিতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখানো
মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা
জনগণের আস্থা অর্জনে পরিষ্কার রোডম্যাপ তুলে ধরা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিগত দিনে ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নের প্রমাণ দলটিকে দিতে হবে কাজের মাধ্যমে। তারা মনে করেন, নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি যদি সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে না পারে, তবে দলটি আবারও রাজনৈতিক সংকটে পড়তে পারে।

জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ প্রশ্নে বিতর্ক
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, “বিএনপি এখন কতটা শহীদ জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করছে, তা নির্ধারণ করতে হলে আগে তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেতে হবে। তখন তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করেই মন্তব্য করা সহজ হবে।”

তিনি বলেন, “যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তাহলে দুর্নীতি ও ঘুসমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করাই হবে বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “দলটি বহু সংকট ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। আমাদের হাজারো নেতাকর্মী গুম-খুন ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। কিন্তু জনগণ এখন আমাদের পাশে আছে। আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত।”

তারেক রহমান প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বাণীতে বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনই এখন সময়ের দাবি।”

সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি রাজধানীসহ সারাদেশে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

আজ সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন
জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ
আলোচনা সভা, র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
গোলটেবিল বৈঠক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

দীর্ঘ ইতিহাস, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং পুনর্গঠনের পথ পেরিয়ে ৪৭ বছরে পদার্পণ করেছে বিএনপি। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলটির সামনে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা—যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।

১৪২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
রাজনীতি নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন