জুম চাষের ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে পাহাড়ি পরিবারগুলো

সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৩:১৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আংজাই পাড়ায় পাহাড়ের আঁকাবাঁকা ভাঁজে এখনো টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ।
সবুজ ধানক্ষেত, হলুদ ফুল, মরিচ, কুমড়া, ভুট্টা ও আদা—নানা ধরনের শস্যে ভরে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই অঞ্চলের পাহাড়ি পরিবারগুলো জীবিকার প্রধান অবলম্বন হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে জুম চাষকে।
জুম চাষের পদ্ধতিতে বছরে নির্দিষ্ট সময়ে পাহাড়ের আগাছা পরিষ্কার করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর বর্ষার পানিকে ব্যবহার করে একই জমিতে একসঙ্গে বিভিন্ন শস্য চাষ করা হয়। ধান, মারফা, তিল, মরিচ, হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ এই কৃষিপদ্ধতির অংশ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রোয়াংছড়ি সদর থেকে প্রায় এক ঘণ্টার গাড়ি যাত্রা শেষে আংজাই পাড়া এলাকায় একটি ছোট টিলার চূড়ায় দেখা যায় মনোরম জুম খেত। চারপাশে সবুজ গাছপালা ও নিস্তব্ধ প্রকৃতি ঘেরা এই স্থানে রয়েছে বাঁশ ও ছনের তৈরি সরল কাঠামোর কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর, যা জুমিয়াদের বিশ্রামের জন্য তৈরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জুম চাষ শুধু একটি কৃষিপদ্ধতি নয়, বরং পাহাড়ি সংস্কৃতির অংশ। জমি প্রস্তুত থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় একধরনের উৎসবের আমেজ। তারা দল বেঁধে গাছ কাটে, আগুন জ্বালায় ও বীজ ছিটায়—এটি তাদের সামাজিক বন্ধনের প্রতীকও বটে।
তবে জুম চাষে কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। বার্ষিক ফলন নির্ভরতা, মাটির উর্বরতা হ্রাস এবং আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট জুম চাষকে কঠিন করে তুলছে। যদিও সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা পাহাড়ি অঞ্চলে আধুনিক কৃষিপদ্ধতি, সবজি চাষ ও ফলদ বাগান স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছে, তবে স্থানীয়রা বলছেন—এই উদ্যোগ টেকসই করতে হলে সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তা আরও বাড়াতে হবে।
১৫১ বার পড়া হয়েছে