প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে ৩ দলের ব্রিফিং

সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:৩৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রোববার (৩১ আগস্ট) রাতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দলের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয় এবং পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে।
বৈঠক শেষে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব জানান, আলোচনার মূল বিষয় ছিল—গণঅভ্যুত্থনে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক ২৫ সহযোদ্ধার মুক্তি, গুম কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রীয় সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিতের অভিযোগ এবং একটি গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন তা না ঘটে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইনগত ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এনসিপি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে। পাশাপাশি, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপেরও দাবি জানানো হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন নির্ধারিত সময় ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন—নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকার কারণ নেই।”
তিনি আরও জানান, নির্বাচনকালীন সরকার এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ ও প্রত্যাশার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, “নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি চক্রান্ত চলছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তবে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য আমাদের সে শঙ্কা অনেকটাই দূর করেছে। নির্বাচন কমিশন যে সময়সূচি ঘোষণা করেছে, সে অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে কথোপকথন ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা খুবই স্বাভাবিক। এই আলোচনা দেশের মানুষের জন্য আশার বার্তা বহন করছে।”
এ সময় সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রসঙ্গও উঠে আসে। মির্জা ফখরুল বলেন, “নুরুল হক নুরের ওপর হামলাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং উদ্বেগজনক। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি—এই হামলার পেছনে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান।
তিনি বলেন, “আগে একদল বাসস্ট্যান্ড দখলে রাখতো, এখন আরেকটি দল নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি একটি সরকার সামান্য চাঁদাবাজি কিংবা দখলদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে তারা কীভাবে একটি জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে?”
এসময় তিনি জানান, সরকার যদি এখনই যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং কার্যকর উদ্যোগ নেয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। “সেক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার নিয়ে তারা একমত হলেও, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশয় প্রকাশ করেন জামায়াতের এই নেতা।
১২৪ বার পড়া হয়েছে