'অর্থনীতি স্থিতিশীল হলেও ব্যক্তি বিনিয়োগ, মজুরি, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বেড়েছে'

রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫ ৫:০৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের অর্থনীতিতে সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ক্ষুদ্র বা পারিবারিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক দুরবস্থা এখনো অব্যাহত রয়েছে, এবং ব্যক্তি বিনিয়োগ, মজুরি, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বেড়েছে।
শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত 'মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতা' অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি দেশের অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরেন।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “গত তিন বছরের তুলনায় বর্তমানে অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে বড় কারণ হলো—অর্থনীতির অস্থিতিশীলতার জন্য যাঁরা দায়ী ছিলেন, তারা এখন ক্ষমতাচ্যুত। অর্থ পাচার ও হুন্ডি কমেছে, ব্যাংক লুটপাট বন্ধ হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।”
তবে তিনি জানান, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমেছে। সরকারের কিছু ভালো পদক্ষেপ যেমন রিজার্ভ বৃদ্ধির উদ্যোগ, খেলাপি ঋণ হিসাবের কঠোরতা, ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগীর পরিচয় নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি প্রশংসনীয় হলেও, সব সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলেও তিনি সতর্ক করেন।
‘মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে বাংলাদেশ’
ড. জাহিদ বলেন, “বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে আছে। এখান থেকে উত্তরণের কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।” বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, ব্যাংক খাতের দুর্দশা, লজিস্টিক দুর্বলতা, শ্রমবাজারে অগ্রগতির অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এর প্রধান কারণ।
তিনি আরও বলেন, “অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এলেও পরিবার পর্যায়ে মানুষ এখনো বিপদে। দারিদ্র্য বেড়েছে, সামাজিক বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিবার বাড়ছে যারা সামান্য অভিঘাতেই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। মানুষ এখন নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে।”
সংস্কারের জন্য দরকার যৌথ উদ্যোগ
সংস্কার প্রসঙ্গে ড. জাহিদ বলেন, “জনগণ সংস্কার চায়, কিন্তু যাঁদের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলে, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছা যথেষ্ট নয়, থাকতে হবে ‘ডেলিভারি ক্যাপাসিটি’। উপদেষ্টা পরিষদ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজ—এই চারটি পক্ষ একসাথে না এলে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্ভব নয়।”
বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কেউ আন্তরিক, কেউ সাহসী, কেউ বেচারা, কেউ আবার দিশাহারা।”
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য সুযোগ
আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি ভারতের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ককে অনিশ্চিত করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন রপ্তানি বাজার তৈরির সুযোগ তৈরি করেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অতিরিক্ত ২০৫ কোটি ডলার রপ্তানির সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত অর্থনৈতিক সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেনের অবদান স্মরণ করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের চেয়ারম্যান ও আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি। বরং বৈষম্য বেড়েছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
১২৫ বার পড়া হয়েছে