মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ৬৮ বছর: পুত্রজায়ায় বর্ণাঢ্য আয়োজন

রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫ ৩:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বর্ণিল আয়োজন, দেশাত্মবোধ আর জনতার উচ্ছ্বাসে মালয়েশিয়া উদযাপন করল স্বাধীনতার ৬৮তম বার্ষিকী।
শুক্রবার সকালে প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার দাতারান প্রাঙ্গণে আয়োজিত কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে উঠে আসে জাতীয় ঐক্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ‘মালয়েশিয়া মাদানি’ চেতনার প্রতিফলন।
এ বছরের স্বাধীনতা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল: ‘মাদানি মালয়েশিয়া: রাকিয়াত দিসানতুনি’ (সদয় জনগণের জন্য মাদানি মালয়েশিয়া)। অনুষ্ঠানে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সামরিক কুচকাওয়াজ এবং জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে। বিশেষ মুহূর্তে রাজা সুলতান ইব্রাহিম ও রানি রাজা জারিথ সোফিয়া নিজে নীল রঙের প্রোটন স্যাট্রিয়া নিও গাড়ি চালিয়ে দাতারান মেরদেকায় পৌঁছান, যা জনতার মাঝে বাড়তি উৎসাহের জোগান দেয়। জাতীয় সংগীত ‘নেগারাকু’ গাওয়া এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
১৪ দফা তোপধ্বনির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার ১৪টি রাজ্যকে প্রতীকীভাবে সম্মান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম, উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি, ফাদিল্লাহ ইউসুফসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও বিদেশি অতিথিরাও অংশ নেন।
বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ ফিরদৌস আরবাইনের নেতৃত্বে রুকুন নেগারার শপথ পাঠ, যিনি সম্প্রতি তেলুক বাতিকে নৌকাডুবিতে উদ্ধারকাজে সাহসিকতা দেখান।
অনুষ্ঠানের আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করে জনপ্রিয় শিল্পী সিটি নুরহালিজার পরিবেশনা। তিনি স্বাধীনতা ও মালয়েশিয়া দিবস উপলক্ষে নতুন অফিসিয়াল থিম সং পরিবেশন করেন, যেখানে হাজারো দর্শক একসাথে গলায় গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠেন।
কুচকাওয়াজ ছিল চূড়ান্ত আকর্ষণ, যেখানে অংশ নেয়:
২১টি মার্চিং ব্যান্ড
৭টি ভাসমান ফ্লোট
৫০৮টি স্থল ও আকাশযান
১১৬টি জনসেবামূলক প্রাণী
১৪,০৬২ জন অংশগ্রহণকারী
প্যারেডটি ছয়টি ভাগে বিভক্ত ছিল: জাতীয়তা, জনগণের শোভাযাত্রা, মঙ্গল, জাতীয় নিরাপত্তা, বিমান প্রদর্শনী এবং মাদানি পরিবেশনা।
সেলাঙ্গর ও ফেডারেল টেরিটরির ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই হাজার শিক্ষার্থী মানব-গ্রাফিক এবং সম্মিলিত কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করে উৎসবে রঙ যোগ করে।
দর্শনার্থীদের মতে, এই আয়োজন জাতীয় ঐক্যের প্রতিচ্ছবি। কুয়ালালামপুর থেকে আসা এক দর্শনার্থী নুরহানিজাহ বলেন, ‘আজকের এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভিন্ন ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি সত্ত্বেও আমরা সবাই এক মালয়েশিয়ান।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাজিফ বলেন, ‘সিটি নুরহালিজার গানটির সময় পুরো ভিড় একসাথে গাইছিল—এটাই আমাদের ঐক্যের প্রকৃত শক্তি।’
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট মালয়েশিয়া ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিনটি জাতীয় গৌরব, ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
১৫৯ বার পড়া হয়েছে