রাসুল (সা.)-এর নামে মিথ্যা প্রচার: সতর্ক করছেন ইসলামি স্কলাররা

বৃহস্পতিবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৫ ৯:২৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাজনৈতিক মঞ্চ ও ইউটিউব ভিডিওতে হাদিসের নামে মিথ্যা বা মনগড়া বক্তব্য ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, এটি শুধু ধর্মীয় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে না, বরং আখিরাতেও ভয়াবহ পরিণতির কারণ হতে পারে।
মিথ্যা হাদিসের ভয়াবহতা কী বলছে ধর্মীয় বাণী?
ইসলামে হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই সতর্ক করে বলেছেন,
“যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে আমার নামে মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন জাহান্নামে নিজের আসন প্রস্তুত করে নেয়।”
— (বুখারি: ১০৭; মুসলিম: ৩)
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হাদিস থেকে স্পষ্ট, রাসুল (সা.)-এর নামে মিথ্যা রটনা শুধু অন্য সাধারণ মিথ্যার মতো নয়; বরং এটি ইসলাম বিকৃতির একটি মারাত্মক রূপ, যার পরিণতি জাহান্নাম।
সমাজে ছড়িয়ে পড়া কিছু বহুল প্রচলিত ‘মিথ্যা হাদিস’
ইসলামি গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক জনপ্রিয় উক্তি বা বক্তব্য মানুষ হাদিস মনে করে গ্রহণ করে, অথচ বাস্তবে এগুলো রাসুল (সা.) বলেননি। উদাহরণস্বরূপ:
“দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করো” — এটি জনপ্রিয় হলেও হাদিস নয়। এর পরিবর্তে সহিহ হাদিস: “প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।” (ইবনে মাজাহ: ২২৪)
“দেশপ্রেম ঈমানের অংশ” — রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হলেও এটি সহিহ হাদিস নয়।
“শবে বরাতে ৩৬০ রহমত নাজিল হয়” — ভুয়া তথ্য। সহিহ হাদিস অনুযায়ী, “মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সকলকে আল্লাহ ক্ষমা করেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)
অপরদিকে, “দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার, কাফিরের জন্য জান্নাত” — এ হাদিস অনেকেই জাল মনে করলেও এটি মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিস (মুসলিম: ২৯৫৬)।
মিথ্যা হাদিস ছড়ানোর চারটি প্রধান মাধ্যম
বর্তমান সময়ে যেসব মাধ্যমে হাদিসের নামে মিথ্যা ব্যাপকভাবে ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম:
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে "একটি দোয়া পড়লেই জান্নাত" জাতীয় বার্তা ভাইরাল হয়, অথচ সেসবের হাদিস ভিত্তি নেই।
২. রাজনৈতিক বক্তব্য:
কিছু বক্তা জনসমর্থন পেতে গিয়ে নবীজির নামে মনগড়া বক্তব্য ব্যবহার করেন—যেমন: “যে অমুক নেতাকে ভালোবাসে, সে জান্নাতি।”
৩. বাণিজ্যিক প্রচারণা:
পণ্যের বিজ্ঞাপনে বলা হয়, “নবীজি বলেছেন, এই বস্তু ব্যবহার করলে আরোগ্য আসবে”—যা নিছক বিক্রয় কৌশল।
৪. ইউটিউব ও শর্ট ভিডিও কনটেন্ট:
“নবীজির এমন একটি বাণী, যা শুনলেই আপনি ধনী হবেন”— এমন শিরোনামে ভিডিও বানিয়ে দর্শক টানছেন অনেকে, অথচ হাদিসে এমন কিছু নেই।
ধর্মীয় ও সামাজিক পরিণতি
ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুল (সা.)-এর নামে মিথ্যা বলার শাস্তি সরাসরি জাহান্নাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব ভুয়া তথ্য সমাজে কুসংস্কার, বিদআত এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সমাধানের উপায় কী?
ইসলামি স্কলারদের মতে, এসব মিথ্যা থেকে বাঁচতে কিছু পদক্ষেপ জরুরি- যাচাই ছাড়া হাদিস শেয়ার নয়, শিশু-কিশোরদের ইসলামী শিক্ষায় ভিত্তি মজবুত করা, মসজিদ-মাদরাসায় সহিহ ও জাল হাদিস পার্থক্য শেখানো, মিডিয়ায় ধর্মীয় বিষয় প্রচারে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ, অনলাইন কনটেন্ট যাচাইয়ে হাদিস গবেষক নিয়োগ।
আলেমদের আহ্বান, রাসুল (সা.)-এর নামে মিথ্যা ছড়ানো শুধুই ভুল নয়, এটি ইসলামের মূলবোধকে বিকৃত করে। তাই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব—সহিহ সূত্র ছাড়া কোনো বক্তব্যকে হাদিস হিসেবে শেয়ার না করা।
১১৯ বার পড়া হয়েছে