অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান: এক ‘অস্বাভাবিক’ রাজনৈতিক পথ চলা

বৃহস্পতিবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৫ ২:২৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের নামটি বহুল আলোচিত, কখনও বিতর্কিত, কখনো প্রশংসিত।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা—সব ভূমিকায় তিনি নিজস্ব এক ‘অস্বাভাবিক’ রাজনৈতিক ধারা গড়ে তুলেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও আদর্শ
ফজলুর রহমানের শৈশব শুরু কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে। ছাত্রলীগের নেতা হয়ে ওঠার পর তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কিশোরগঞ্জে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম সাহসিকতা দেখিয়ে দলীয় পরিবেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। জাতির স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর সৎ অবস্থান তাকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চোখে ‘অস্বাভাবিক’ দৃঢ়তার প্রতীক করে তোলে।
দলবদল ও নীতিভ্রষ্টতা
রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন এবং ১৯৮৬ সালে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়েন, তাতে সাফল্য কম। আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে জেলা সভাপতি এবং চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ লাভ করেন। এভাবে বারবার দলবদলের কারণে তাঁর অস্বাভাবিক অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়।
বিতর্কিত বক্তব্য ও রাজনৈতিক বিভ্রান্তি
তাঁর অস্বাভাবিক রাজনৈতিক ভাষ্য নিয়ে বড় বিতর্ক ছড়িয়েছে। সর্বশেষ গণআন্দোলনের মধ্যে জামায়াত-শিবির ও এনসিপিকে “কালো শক্তি” এবং ৫ আগস্টের ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ ও ‘কালো শক্তির দখল’ বলে অভিহিত করেছেন। দলীয় নীতি-ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি তাঁর পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও গণতন্ত্রের পক্ষে বারবার উচ্চকণ্ঠ তিনি। টিভি টকশো ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বক্তব্যের ফলে আওয়ামী-প্রেমিক বলে প্রতিপক্ষ তাঁকে সমালোচনা করেছে।
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব
বারবার নির্বাচন, বারবার ব্যর্থতা—একে রাজনৈতিক মহল তাঁর ‘অস্বাভাবিক’ অস্থিরতার সাথে তুলনা করে। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়েও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারেননি। দল বদলের আনন্দের চেয়ে দল সমর্থনে স্থায়ী জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি।
মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে পুনর্বাসন প্রচেষ্টা
বিএনপিতে থেকেও তিনি অনেক সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী চেতনার কথা বলেন। ফলে বিএনপি নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়; একই সাথে আওয়ামী ঘরানার পুনর্বাসন প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেন। তার মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে আসবেই।
সবশেষে
জীবনের প্রতিটি বাঁকে ‘অস্বাভাবিকতা’—মন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা, নেতা, বিতর্কিত বক্তা, দাবি-উগ্রতা—সবই ফজলুর রহমানকে করেছেন অনন্য রাজনৈতিক চরিত্র। চরম আদর্শ ও দুই দলের মধ্যে অবস্থান তাঁকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের সত্য ও গণতন্ত্রের পক্ষে বারবার শব্দপ্রতিরোধী করে তুলেছে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
১২০ বার পড়া হয়েছে