বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়ার ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ, সাংস্কৃতিক চেতনায় অবদান অক্ষুন্ন

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
২৬ আগস্ট ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বোধন থিয়েটার। এখন তার ৪৬তম বর্ষ উদযাপন করছে সংগঠনটি। এই দীর্ঘ পথচলায় বোধন কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক চেতনায় অমূল্য অবদান রেখে আসছে।
৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সংগঠনের সকল দর্শক, শুভানুধ্যায়ী, নাট্যপ্রেমী ও কর্মীদের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল আসলাম আলী। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহেন্দ্রক্ষণে আমি সকল নাট্যপ্রেমী, দর্শক ও নাট্যবন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নাট্যচর্চার মাধ্যমে সংগঠনটি শুধু নাট্যজগতে নয়, মানবিক মূল্যবোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বোধন থিয়েটার তার দীর্ঘ পথচলায় অভিনয়, নির্দেশনা ও প্রযোজনায় অসংখ্য উল্লেখযোগ্য নাটক উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাটক হলো- শুধু করি ভূমির নামে, বকফুল কন্যা, কোর্ট মার্শাল, ত্যাগ, চন্দ্রাবতী কথা, চোর চোর, থিয়েটার বাবু, হারাধনের দশটি ছেলে, রাইফেল, জুতা আবিষ্কার, জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, আলো একটু আলো, ওরা কদম আলি, হীরক রাজার দেশে, ইঙ্গিত, মিছিল, গুপ্তধন, একটি অবাস্তব গল্পসহ অসংখ্য নাটক।
বোধন থিয়েটারের নাট্যকর্মী ও সাংবাদিক রনজক রিজভী লিখেছেন, আমি বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়ার একজন নাট্যকর্মী। আমার জীবনযাত্রায় নাট্যচর্চা এবং অভিনয় একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে আছে। এই পথচলায় আমি পড়াশুনা, সাংবাদিকতা এবং নাট্যচর্চাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। সব কিছুই আমাকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে, তবে বিশেষ করে নাট্যচর্চা আমাকে নতুন নতুন ভাবনা ও মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
বোধন থিয়েটারের অবস্থান আমার জীবনে এক অনন্য জায়গায়। এর মাধ্যমে আমি শুধু একজন নাট্যকর্মী হিসেবেই নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছি। নাট্যচর্চা করতে গিয়ে আমি শিখেছি সহনশীলতা, একতা, সংবেদনশীলতা এবং সাহসের মতো মূল্যবোধ। এই সব গুণাবলী বোধন থিয়েটারের মাধ্যমে আমার মধ্যে আসতে শুরু করে, যা আজ পর্যন্ত আমার ব্যক্তিত্বের অংশ।
আজ যখন বোধন থিয়েটার ৪৭তম বর্ষে পদার্পণ করছে, এই মহেন্দ্রক্ষণ আমার কাছে অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের। এই দীর্ঘ পথচলায় অসংখ্য নাট্যচর্চা, দর্শকপ্রিয়তা ও অসংখ্য নাট্যবন্ধুর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আমি মনে করি- প্রতিটি সাফল্য, প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ এবং নাট্যপ্রেমীদের জন্য নিবেদিত এই সংগঠনটি সব সময় প্রাণোচ্ছল, উদ্দীপ্ত ও সৃষ্টিশীল হয়ে থাকবে।
আমি এই বিশেষ মুহূর্তে অফুরান ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় থিয়েটার ও এর প্রতিটি সদস্যের প্রতি। তাদের এই অমলিন ভালোবাসা, উৎসাহ ও সহযোগিতা আমাদের এই পথচলায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে বোধন থিয়েটার যেন কেবল একটি নাট্যসংগঠন নয় বরং এক অন্যরকম পরিবার, যেখানে প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে গড়ে উঠেছে গভীর বন্ধুত্ব।
এই ৪৭ বছর পেরিয়ে আসা বোধন থিয়েটারের অগ্রযাত্রা ঐতিহাসিক। ঢাকার বাইরে নাট্যচর্চায় ভিন্ন আঙ্গিক ও পরিবেশনায় নতুনত্ব দেখিয়ে বোধন আলোচনায় এসেছে বারবার। তাই ভবিষ্যতেও এই সংগঠন যেন তার নাট্যচর্চা, সৃজনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে অটুট থাকে, এই কামনা রইল। আমি আশাবাদী, আমাদের এই নাট্যপ্রেরণা অব্যাহত থাকবে এবং নতুন প্রজন্মের জন্যও এই সংগঠন নতুন করে পথ দেখাবে। জয় হোক- 'জনগণের জন্য শিল্প'।
বোধন থিয়েটারর প্রতিষষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট অভিনেতা ও পরিচালক কচি খন্দকার লিখেছেন, বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়া এক ঐতিহাসিক নাম। এই নামের সাথে আমাদের কিশোর তরুণ মনের সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে বোধন থিয়েটার মানেই আলী আফরোজ পিনু তারপর যে নাম গুলি পর্যায়ক্রমে আসবে মহিউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, শাহিন সরকার, মঞ্জু, রবি, মজু, দিলদার, কিসলু,অসংখ্য চেহারা ভাসছে চোখের সামনে যারা প্রত্যেকে আমার বড়ভাই।এই যে বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতির ইতিহাসে এক অনন্য নাম। আধুনিক বার্তা দিয়ে কুষ্টিয়ার মানুষকে বুঝিয়ে দিল মডার্ন থিয়েটারের এক যুগান্তর ঘটাতে তারা এসেছে। অসাধারণ সব প্রযোজনা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করে ফেলে। নাট্য আন্দোলনে নব যুগের সুচনা করলো। সেই বোধন এখন অভিজ্ঞতায় চিন্তা চেতনায় নক্ষত্রের মত আকাশে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। এই আবির্ভাব দিনে বোধনের জয়গান করি। জয় হোক বোধন থিয়েটারের। জয় হোক থিয়েটারের। জয় হোক মানুষের।
গ্রাম থিয়েটারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হান্নান লিখেছেন, গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের শিকড় সন্ধানী সংগঠন বোধন থিয়েটার, অনেক অনেক অভিনন্দন বোধন থিয়েটারের সকলকে।আমাদের হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনে।
হারুনুর রশীদ লিখেছেন, কুষ্টিয়া বোধন থিয়েটারের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে কুষ্টিয়া জেলা যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা রইলো।পূর্বের মত আগামী দিনগুলি সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাক কুষ্টিয়া বোধন থিয়েটার।সবার জন্য রইলো শুভ কামনা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন।
রুমী ইসলাম লিখেছেন, শুভ জন্মদিন বোধন থিয়েটার এই আমাদের পথচলা। তুমি আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছো অনেক কিছু শিখিয়েছো। তোমার কাছে এসে কেউ খালি হাতে ফিরে যায়নি।যেদিকে তাকিয়ে দেখবে মনে হবে সবই তোমার তৈরি।শিক্ষা দিখখা ভালোবাসা সবই যেন তোমার হাতে গড়া।তাই তোমাকে স্মরন করি প্রতিদিন প্রতিবছর,হয়তো আমরা থাকবোনা কেউ কিন্তু তুমি এভাবেই আমাদের পাশে থাকবে।
এছাড়া, কুষ্টিয়াসহ সারা দেশের শিল্পীবৃন্দও বোধন থিয়েটারের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই সংগঠনটি কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার দীর্ঘ পথচলায় নতুন প্রজন্মের জন্য মানবিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণে ভবিষ্য নাট্যযোদ্ধা তৈরি করে দিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৬৩ বার পড়া হয়েছে