রুমিন ফারহানা বনাম হাসনাত আবদুল্লাহ: কথার লড়াইয়ে গালি

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজনীতিতে শালীনতা ও ভদ্রতার প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুমিন ফারহানা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর মধ্যে সাম্প্রতিক কথার লড়াইকে ঘিরে।
নির্বাচন কমিশনের শুনানি কেন্দ্রিক এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে শুরু হয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্য বাকযুদ্ধে রূপ নেয় এই বিরোধ।
রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানিতে বিএনপি ও এনসিপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর একটি সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ দাবি করেন, “বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে, আর নির্বাচন কমিশনের সামনে যা ঘটেছে তা ছিল একটি ‘টেস্ট ম্যাচ’ মাত্র।”
তিনি বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে ইঙ্গিত করে বলেন, “বিএনপির ভেতরেই কিছু নেতা রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের থেকেও বেশি আওয়ামী লীগ। রুমিন তাদের মধ্যে একজন। তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।”
পরবর্তীতে, নিজের বক্তব্যের ভাষাগত তীব্রতা উপলব্ধি করে হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, “নারীর রাজনৈতিক অবস্থান যেমনই হোক, তার শরীর বা ব্যক্তিজীবনকে টেনে এনে স্লাটশেমিং করার অধিকার কারো নেই।” তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এ ধরনের ভাষার ব্যবহার তিনি সমর্থন করেন না।
তবে এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হননি রুমিন ফারহানা। সোমবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। পোস্টে তিনি লিখেন, “এটা ওই ফকিন্নির বাচ্চাটা না, যে আমাকে আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক বলেছে?”
এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকেই একে ‘অশালীন’ বলে সমালোচনা করেছেন, যদিও কিছু নেটিজেন রুমিনের অবস্থানকে সমর্থনও জানিয়েছেন।
পোস্টের সঙ্গে রুমিন ফারহানা এনসিপি নেতা হাসনাতের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা দাবি করে কিছু স্ক্রিনশট যুক্ত করেন। তবে পরে যাচাই করে দেখা যায়, এগুলো একটি ভুয়া ছাত্রলীগের প্যাড থেকে তৈরি, যা পূর্বেও বিভিন্ন সময় ভুয়া তথ্য ছড়াতে ব্যবহৃত হয়েছে—এমনকি এতে বিশ্বখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসির নামও জুড়ে দিয়ে হাস্যকর কন্টেন্ট ছড়ানো হয়েছিল।
উল্লেখযোগ্য যে, এনসিপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় রুমিন ফারহানা দাবি করেন, “আমি একজন নারী, এবং শুনানিতে আমাকে প্রথমে ধাক্কা দেওয়া হয়। আমার সহকর্মীরা চুপচাপ বসে থাকবে কেন? তাদের প্রতিক্রিয়ায় যা ঘটেছে, তা স্বাভাবিক।”
এদিকে, দুই নেতার কড়া ভাষার ব্যবহার, পারস্পরিক ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য পাল্টাপাল্টির ঘটনায় রাজনীতিতে ভদ্রতা, শালীনতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এমন ঘটনা বাড়তে পারে, তবে নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে আরও পরিপক্বতা ও পরিমিতিবোধ প্রত্যাশা করে সাধারণ জনগণ।
১৪০ বার পড়া হয়েছে