সর্বশেষ

মতামত

ইসহাক দার: ইতিহাসের সমাধান ছাড়া সম্পর্কের পূর্ণতা নয় - বাংলাদেশে

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ ৫:২৩ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন।

২৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে তাঁর ঢাকা আগমন ঘটে। তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ সফর দীর্ঘদিন¬ পর দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।


সরকার সঙ্গে বৈঠক
ইসহাক দার সফরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, এবং বহুমুখী চুক্তি-সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।


বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের গণহত্যা, অর্থনৈতিক দায় ও ‘stranded পাকিস্তানি’ ইস্যু পুনরায় জোরালোভাবে তোলা হয়। পাকিস্তানের মন্ত্রী দাবি করেন—১৯৭৪ ও ২০০০ সালে এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে, তবে বাংলাদেশ সরকার সেই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে ইতিহাসের স্বীকৃতির ওপর জোর দিয়েছে।


রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ
সফরের বিশেষ মুহূর্তে ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এসব বৈঠক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা, নির্বাচনের পরে উদ্ভূত প্রেক্ষাপট ও দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক সমঝোতার গুরুত্বকে সামনে তুলে ধরে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সামঞ্জস্য, দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার নিরাপত্তা ও ঐক্যের জন্য কৌশলগত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।


ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক
দ্বিতীয় দিনে সকালের বৈঠকে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ফরেন সার্ভিস একাডেমির সহযোগিতা, সরকারি সংবাদ সংস্থার মধ্যকার যোগাযোগ এবং স্ট্র্যাটেজিক থিংকট্যাংকগুলোর যৌথ সহযোগিতাসহ মোট ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হয়।

এই চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যে তথ্য, বিষয়বস্তু ও দক্ষতা বিনিময়ে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বিশেষত, ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত নানা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত গড়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।


ইতিহাস ও কূটনৈতিক জটিলতা
এ সফর ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আপসের এক বলিষ্ঠ সূচনা’ হলেও, ঐতিহাসিক অমীমাংসিত ইস্যু ও বিশ্বাসযোগ্যতা সংকটে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়, “ইতিহাসের স্বীকৃতি ও সমস্যার পূর্ণ সমাধান ছাড়া সম্পর্কের পূর্ণতা সম্ভব নয়।”

শেষকথা
ইসহাক দারের ঢাকা সফর রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্তরে ভবিষ্যতের দ্বিপক্ষীয় পথনির্দেশ নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিহাস ও মানবাধিকার বিষয়ে জোরালো অবস্থান এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বন্ধুত্বের বার্তা—এই দ্বন্দ্ব-সমন্বয় দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়ার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

 

 


লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

১২১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন