সর্বশেষ

সারাদেশ

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ফেরানোর আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু 

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার প্রতিনিধি

রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ ২:৪৫ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার আট বছর পার হলেও প্রত্যাবাসনের কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।

উল্টো সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র সংঘাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারে সেনা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যকার সংঘাতে নতুন করে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা।

এমন পরিস্থিতিতে আজ রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী এলাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন—‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ফেরানো এবং প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো।


গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী লালু বলেন, “বেশ কয়েকটি পয়েন্টে থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে। ভয়ে সীমান্তের কাছাকাছি চিংড়ি প্রজেক্টে থাকা লোকজন সরে গেছে।”

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার একদিনেই ৬২ জন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকানো হয়েছে। তবে সীমান্তের ওপারে এখনও হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। একটি চক্র রোহিঙ্গাদের অর্থের বিনিময়ে পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের ধরতে অভিযান চলছে।”

রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে। ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা মো. হোসাইন বলেন, “রাখাইনে নির্যাতন এখনও বন্ধ হয়নি। নিরাপত্তাহীনতায় অনেকে পালিয়ে আসছেন। সীমান্তে আত্মীয়স্বজন আটকে আছেন—আমরা তাদের খবর পাচ্ছি।”

মংডুর সিকদারপাড়া থেকে পালিয়ে আসা হাফেজ আহমদ বলেন, “আমার গ্রাম এখন পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন। সেখানে কোনো রোহিঙ্গা আর নেই।”

আরেক রোহিঙ্গা শরণার্থী নুরুল হাকিম জানান, “আরাকান আর্মি আমাদের শিশুদের জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবারপ্রতি চাঁদা দাবি করছে। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছি।”


রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন করে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আহ্বান জানাতে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে তিন দিনের সম্মেলন। আয়োজনে থাকছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব জানান, সম্মেলনে প্রায় ৪০টি দেশের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের আলোচনা থেকে একটি অবস্থানপত্র তৈরি করা হবে, যা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। এরপর চূড়ান্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে কাতারের দোহায়, ডিসেম্বর মাসে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া গণনির্যাতনের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নতুন করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বর্তমানে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সহায়তাও কমে যাচ্ছে। তবে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
 

১৩২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন