জুলাই শহীদ পরিবারের অনুদান-বিতরণে নতুন বিধিমালা জারি

বৃহস্পতিবার , ২১ আগস্ট, ২০২৫ ৯:০৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের নিয়ম চূড়ান্ত করলো সরকার।
সম্প্রতি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। নতুন এই বিধিমালায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা বণ্টনের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী, শহীদের পরিবার তিন ভাগে সহায়তা পাবে—স্বামী বা স্ত্রী এক-তৃতীয়াংশ, সন্তান এক-তৃতীয়াংশ এবং বাবা-মা এক-তৃতীয়াংশ। একাধিক স্ত্রী, সন্তান বা জীবিত পিতা-মাতা থাকলে প্রাপ্ত অংশ সমানভাবে ভাগ হবে। শহীদের স্বামী/স্ত্রী না থাকলে তার অংশ সন্তান ও পিতামাতার মধ্যে সমানভাবে বণ্টন হবে। অন্যদিকে সন্তান না থাকলে সেই অংশ যাবে স্বামী/স্ত্রী ও পিতামাতার মধ্যে, এবং বাবা-মা না থাকলে তাদের অংশ ভাগ হবে স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে।
সরকারি সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারে চলমান দ্বন্দ্ব ও অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এ বিধিমালা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সহায়তা বিতরণ নিয়ে প্রায়শই অভিযোগ, সালিশ ও আইনি জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইনের ব্যাখ্যা নিয়েও দেখা দিয়েছিল বিভ্রান্তি। নতুন এই গাইডলাইনের ফলে বিতরণ হবে নির্দিষ্ট নিয়মে এবং সুস্পষ্ট কাঠামোতে।
সরকার ইতোমধ্যে প্রতিটি শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের সঞ্চয়পত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম কিস্তি হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে; বাকি ২০ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দেওয়া হবে। পাশাপাশি, প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতাও পাবেন শহীদ পরিবার।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. ফারুক হোসেন জানান, “ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইনে বিভ্রান্তির অবসানে এখন আমরা বিধিমালা অনুযায়ী সহায়তা বিতরণ করছি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী পুরোনো বিতরণেও সমন্বয় আনা হবে।”
শহীদ স্বামী/স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ করলে বন্ধ হবে ভাতা
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, ভাতাপ্রাপ্ত কোনো সদস্য মারা গেলে বা স্বামী/স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ করলে তার অংশের ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। এ ভাতা পরে পরিবারের অন্য কেউ দাবি করতে পারবেন না।
আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে পাবেন শহীদের মর্যাদা
বিধিমালায় বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হয়ে দেশে বা বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যেসব জুলাইযোদ্ধা মারা গেছেন, তারাও ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে গণ্য হবেন। তাদের পরিবারও শহীদ পরিবারের মতো আর্থিক সুবিধা ও ভাতা পাবে। তবে আহত অবস্থায় যদি কেউ এককালীন আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন, তা শহীদ অনুদান থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হবে।
বিরোধ নিষ্পত্তিতে গঠিত হবে সালিশ বোর্ড
শহীদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে গঠিত হবে সালিশ বোর্ড। এতে থাকবেন গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও উভয় পক্ষের মনোনীত একজন করে সালিশকারি। সালিশ বোর্ডের সিদ্ধান্তে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে ৩০ দিনের মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আপিল করতে পারবেন। মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
পুনর্বাসনে প্রশিক্ষণ ও ঋণের সুযোগ
জুলাই শহীদ ও যোদ্ধা পরিবারের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষা, ফ্রিল্যান্সিং, কৃষি, পশুপালন, ফুড ও হসপিটালিটি খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর। একই সঙ্গে উপার্জনমুখী কর্মকাণ্ডের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানেও উদ্যোগ নিতে পারবে অধিদপ্তর।
থাকবে তিনটি পর্যায়ে কমিটি
শহীদ ও যোদ্ধা পরিবার কল্যাণে গঠিত হবে তিনটি কমিটি—কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, জেলা পর্যায়ে ডিসি এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও।
১৫২ বার পড়া হয়েছে