এইচএসবিসি ব্যাংকে একদিনেই ৩ শতাধিক কর্মী ছাঁটাই

বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫ ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর, একদিনেই তিন শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি।
তালিকায় রয়েছেন এমন অনেক কর্মকর্তা, যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাংকটিতে কর্মরত ছিলেন। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে হতবাক কর্মীরা চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
ছাঁটাইয়ের পেছনে রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধ
৩০ জুলাই ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর ঠিক ক’দিনের মধ্যেই কর্মীদের হাতে পৌঁছে যায় অব্যাহতির চিঠি। কর্মীদের জানানো হয়েছে, ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত তাঁদের সময় দেওয়া হবে, তবে কেউ চাইলে তার আগেই স্বেচ্ছায় বিদায় নিতে পারেন।
এইচএসবিসি জানায়, বর্তমানে তারা নতুন রিটেইল গ্রাহক গ্রহণ বন্ধ করেছে এবং বিদ্যমান হিসাবধারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আমানত অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া খুচরা ব্যাংকিং সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে—ব্যক্তিগত হিসাব, গাড়ি ও বাড়ি ঋণ, মেয়াদি বিনিয়োগ, বিমা ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ইত্যাদি।
ছাঁটাই নিয়ে ক্ষোভ, আলোচনায় অনাগ্রহ ব্যাংকের
ধানমন্ডি শাখার এক কর্মকর্তা জানান, “হয়তো বা ৩০০-এর বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। আমাদের বলা হয়েছে, ৩১ মার্চই শেষ কর্মদিবস। তবে কেউ চাইলে আগে থেকেই চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যৌক্তিক কিছু দাবি জানালেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা গুরুত্ব দিচ্ছে না। দাবি-দাওয়া লিখিতভাবে পেশ করা হবে।”
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের নওরিন ইসলাম বলেন, “বিষয়টি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ও গোপনীয়। কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই।”
রেকর্ড মুনাফার বছরেও কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রশ্ন
২০২৪ সাল শেষে এইচএসবিসি বাংলাদেশে রেকর্ড ১,০৮৬ কোটি টাকার মুনাফা করে। একই সময়ে ব্যাংকের আমানত ছিল ২২,৬৯৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১৮,৯২৮ কোটি টাকা।
সুদ খরচ কমে যাওয়া ও বিনিয়োগ থেকে বাড়তি আয়ের কারণেই এই মুনাফা এসেছে বলে দাবি ব্যাংকের। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধ এবং গণছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানির আশঙ্কা
ব্যাংকটি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতারা। বিশেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট ফাইলসহ নানা প্রক্রিয়ায় জটিলতার মুখে পড়ছেন। মাঝপথে ব্যাংক পরিবর্তন তাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হবে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা?
মহামারি করোনা পরবর্তী সময়ে এইচএসবিসি বিভিন্ন দেশে বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে একসঙ্গে ১১৪টি শাখা বন্ধ করে দেয়। এছাড়া বাংলাদেশে এক সময় জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগও ওঠে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে।
উপসংহার:
একদিকে যখন ব্যাংকটি রেকর্ড মুনাফার দাবি করছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের কর্মীদের আকস্মিক ছাঁটাই ও রিটেইল কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ব্যাংকিং খাতের এমন অনিশ্চয়তায় অনেকেই ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
১১১ বার পড়া হয়েছে