বান্দরবানের মংক্যঘোনায় সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ, জনদুর্ভোগ চরমে

সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫ ৬:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বান্দরবান শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মংক্যঘোনার প্রধান সড়কের দুপাশে প্রতিদিন ট্রাকভর্তি পচা আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে পৌরসভা। এতে নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য, পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ।
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শহরে প্রতিদিন গড়ে ৪০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় সড়কের পাশে ফেলে রাখা হচ্ছে পচা সবজি, ফল, খাবারের অবশিষ্টাংশ, প্লাস্টিক ও পলিথিন। মাঝে মাঝে এসব বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, ফলে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, “দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পৌরসভা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। প্রতিদিন এখানে ট্রাকে করে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, আর আমরা বাসিন্দারা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বাস করছি।”
সরেজমিনে দেখা যায়, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শহরের স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। দুর্গন্ধের কারণে অনেকেই নাক চেপে রাস্তা পার হন। কলেজছাত্র রাতুল ইসলাম জানান, “পচা বর্জ্যের গন্ধে হাঁটাও দুষ্কর। অনেক সময় বমি বমি ভাব হয়।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দূষণ শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ। সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহীন হোসাইন চৌধুরী জানান, “খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলে রাখলে জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গু ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়।”
পর্যটকদের কাছেও এটি বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। সিলেট থেকে আসা পর্যটক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, “মংক্যঘোনার রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশে হাজার টনের বেশি বর্জ্য দেখে হতাশ হয়েছি। প্রকৃতি উপভোগের আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়।”
স্থানীয় পরিবেশবিদ ও সাংবাদিক অংসিংনু বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য শহরের বাইরে একটি নির্দিষ্ট ল্যান্ডফিল্ড তৈরি করা দরকার। একইসঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন কম্পোস্টিং, রিসাইক্লিং ও ইনসিনারেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।”
বিষয়টি নিয়ে পৌর প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এসএম মনজুরুল হক জানান, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করছেন। আমরা নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও পানি নিষ্কাশনের কাজ করছি। দিনে বর্জ্য ফেলা নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “বান্দরবান পর্যটন কন্যা হিসেবে পরিচিত। এখানে একটি পরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
১৩২ বার পড়া হয়েছে