জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রধান উৎস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫ ১:৪৮ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ শিশুর জন্ম এবং ২০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ঘটলেও, জন্ম নিবন্ধনের হার এখনো সন্তোষজনক নয়।
শুধুমাত্র ৪৯ শতাংশ শিশু সময়মতো জন্ম সনদ পাচ্ছে। অথচ বেশিরভাগ জন্ম হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হলেও নিবন্ধনের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের সংযুক্তি নেই। এই ব্যবধান বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬.৯— ‘সবার জন্য আইনগত পরিচয় নিশ্চিতকরণ’— অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন সংশোধনের মাধ্যমে দেশের সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে (হাসপাতাল, ক্লিনিক, মাতৃসদন ও কমিউনিটি হেলথ সেন্টার) জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্যের প্রধান তথ্যদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নারী মৈত্রী।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটের দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি তোলা হয়। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ও গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর-এর সহায়তায় আয়োজিত এই সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন ও ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, “যেহেতু দেশে অধিকাংশ জন্ম-মৃত্যু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ঘটে, তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অংশ করলেই জন্ম নিবন্ধনের হার দ্রুত বাড়বে এবং প্রতিটি শিশুর আইনগত পরিচয় নিশ্চিত হবে।”
ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. মঈন উদ্দিন মনে করেন, “সম্পূর্ণ ও কার্যকর সিভিআরভিএস (সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভিটাল স্ট্যাটিস্টিকস) বাস্তবায়ন করতে পারলে ভবিষ্যতে আর আলাদা করে জাতীয় জনশুমারির প্রয়োজন পড়বে না।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. শাহ আলী আকবর আশরাফী বলেন, “আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রধান তথ্যদাতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে নিবন্ধন হবে আরও দ্রুত, সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ।”
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আখতার ডলি বলেন, “এই আইন সংস্কারে সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, যাতে করে সময়োপযোগী সংশোধনী আনা সম্ভব হয়।”
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা এ বিষয়ে একটি যৌথ স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেন, যা শিগগিরই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে। এতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন সংশোধনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রধান তথ্যদাতা হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে।
আয়োজকরা মনে করছেন, এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে দেশে আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নাগরিক নিবন্ধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যেখানে কোনো শিশু আর আইনি পরিচয় থেকে বঞ্চিত থাকবে না।
১০৫ বার পড়া হয়েছে