সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা: প্রতিরোধে ১৩ সুপারিশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির

মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫ ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশজুড়ে টানা বর্ষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্তের কারণে দ্রুতগামী যানবাহনে দুর্ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত মেরামতের পাশাপাশি বৃষ্টিপ্রতিরোধী সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের আধুনিক কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ আহ্বান জানান। একই সঙ্গে জুলাই মাসে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
জুলাই মাসে ৫৫৪টি দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৮, আহত ১৪১১
সংগঠনের দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল জানায়, শুধু জুলাই মাসেই দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫৫৪টি সড়ক, রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনায় ৫৬৮ জন নিহত এবং ১৪১১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫০৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২০ জন, আহত হয়েছেন ১৩৫৬ জন।
রেলপথে ৩৪টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩১ জন, আহত ৪১ জন। নৌপথে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ১৪ জন আহত এবং ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতেই এক-তৃতীয়াংশ প্রাণহানি
জুলাই মাসে ১৬২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৯ জন নিহত হয়েছেন। যা মাসের মোট দুর্ঘটনার ৩২.০১ শতাংশ, নিহতের ৩২.৫০ শতাংশ এবং আহতের ১০.৬১ শতাংশ।
বিভাগ অনুযায়ী দুর্ঘটনার চিত্র
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা: ১২২টি দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত, ২৯৫ জন আহত।
বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম: ২৩টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ৯৫ জন আহত।
দুর্ঘটনায় নিহতদের পেশাগত পরিচয়
জুলাই মাসে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন—
১২০ জন চালক
৯০ জন পথচারী
৭০ জন নারী
৫৬ জন শিশু
৫০ জন শিক্ষার্থী
২ জন পুলিশ সদস্য
১ জন মুক্তিযোদ্ধা
৫ জন শিক্ষক
৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যা উঠে এসেছে
বিবৃতিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে যে কারণগুলোকে দায়ী করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বর্ষায় সড়কের গর্ত সৃষ্টি
অবৈধ ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চলাচল
রোড সাইন ও আলোকসজ্জার অভাব
সড়কে ডিভাইডার ও ফুটপাত না থাকা
নির্মাণ ও যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন
উল্টো পথে চলাচল, চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী পরিবহন
অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি
বিরামহীনভাবে চালকের গাড়ি চালানো ও বেপরোয়া গতি
প্রতিরোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১৩ দফা সুপারিশ
পরিস্থিতি উত্তরণে যাত্রী কল্যাণ সমিতি যেসব সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক মেরামত
জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা
দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল ফিটনেস ব্যবস্থার প্রচলন
রোড সাইন, রোড মার্কিং, ফুটপাত ও সার্ভিস লেইনের ব্যবস্থা
চাঁদাবাজি বন্ধ ও চালকদের ন্যায্য বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিতকরণ
ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ
মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ
চালকদের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও আয়কর বাতিল
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, বর্ষা মৌসুমে সড়ক ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির ঘাটতি দুর্ঘটনার হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। সংগঠনটি সড়ক ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই ও আধুনিক রোড সেফটি সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
১০৭ বার পড়া হয়েছে