কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের পদদান ও দুর্নীতির অভিযোগ!

সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫ ৭:০৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
কুষ্টিয়ায় টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ এবং সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার।
হঠাৎ করে নেতাবনে যাওয়া জাকির সরকারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড স্থানীয় রাজনীতিতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে, কারণ এর আগে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনও ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কুষ্টিয়া জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সরাসরি অভিযোগ, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের পদ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের বিএনপি নেতারা। কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি গোলাম সারোয়ার বিশ্বাস ও এডভোকেট গোলাম মোহাম্মদও এই অভিযোগ দিয়েছেন।
বাগুলাট বিএনপি’র সাবেক সভাপতি জানিয়েছেন, কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দলের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, এবং দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকারী নেতা কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এর প্রভাব দলীয় আস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে।
ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে বিএনপির পদে বসানোর জন্য টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রব্বান সেখ, যুব বিষয়ক সম্পাদক মো. ফিরোজসহ বেশ কয়েকজনের নাম। প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডেও একই পরিস্থিতি। এই নেতাদের বেশিরভাগই বর্তমানে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে পদধারী।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে বিএনপির পদে বসানোর জন্য সার্চ কমিটি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ জানান, এই প্রক্রিয়ায় নেতাদের অজান্তে টাকা দিয়ে পদ বাণিজ্য, গ্রুপিং, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, মামলা ও অন্যান্য অপকর্মের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে দলের সম্মান ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের দৃষ্টিতে বিষয়গুলো পাঠানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি, ফলে হতাশা এবং ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের এই অবনতি ও অনিয়মের জন্য ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেনই দায়ী। কুষ্টিয়ার বর্তমান বিএনপি আহ্বায়ক কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ বলে আখ্যায়িত করে দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। কিন্তু এখনো কোনও উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি। ফলে দলীয় নেতৃত্ব ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার মন্তব্য করেন, কুষ্টিয়ার বিএনপি’র এই কমিটি ব্যর্থ, কারণ এর মাধ্যমে সংগঠনের কোনও উন্নতি হয়নি। বরং চারটি আসনে যে শক্তি ছিল, তা ভেঙে পড়ছে, এবং আগামী নির্বাচনে হারার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাবেক যুবদলের আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান বলেন, অভিযোগ ও আন্দোলনের মাধ্যমে কমিটি বাতিলের দাবি জানানো হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুল হাসান বলেন, বর্তমান কুতুব-জাকির কমিটিকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি বললে ভুল হবে না। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। আর চলতে পারে না।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেনের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৭ বার পড়া হয়েছে