গড়াই নদীর ভয়াবহ ভাঙনে অস্তিত্ব সংকটে বড়ুরিয়া গ্রাম

শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫ ৯:২১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বড়ুরিয়া গ্রামের অধিকাংশ অংশ গড়াই নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে।
এক সময় যেখানে ছিল প্রায় ১৬শ বিঘা জমি ও ৭০০ পরিবার, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২৫০ বিঘা জমি ও প্রায় ২০০ পরিবারের বসতিতে। নদীর গর্ভে চলে গেছে শত শত মানুষের সহায়-সম্পদ, ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও স্বপ্ন।
স্থানীয়রা জানায়, গড়াই নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে বড়ুরিয়া গ্রামের দুই-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন এতটাই তীব্র যে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ মিটার করে নদী গিলছে বসতভিটা। নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গনেশপুর চর জেগে উঠলেও সেই চরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বড়ুরিয়ার মানুষদের।
বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্ভোগ
স্থানীয় কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, "আমাদের জমি ভেঙে ওপারে চর হয়েছে। কিন্তু কুষ্টিয়ার মানুষ সেখানে যেতে দেয় না। কেউ আমাদের সাহায্য করছে না।"
ইসহাক মন্ডল জানান, গত দুই দশকে গ্রামের অনেক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। কেউ কেউ সব হারিয়ে এখন যাযাবরের মতো জীবনযাপন করছেন।
কৃষ্ণনগর গ্রামের আবদুর রহিম মন্ডল বলেন, "ছয়বার বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছি। আট বিঘা জমি ছিল, এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করি। গড়াই নদী সব কেড়ে নিয়েছে।"
অস্থায়ী উদ্যোগে থেমে আছে প্রতিরোধ
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে অস্থায়ীভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, “চলতি প্রকল্পে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত অস্থায়ী জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এরপর স্থায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে তা নির্ভর করছে বরাদ্দের ওপর।”
ভবিষ্যৎ কি?
ভাঙনপ্রবণ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, শুধুমাত্র অস্থায়ী পদক্ষেপে সমস্যার সমাধান হবে না। বড়ুরিয়া ও আশপাশের এলাকার মানুষ বারবার দাবি করে আসছেন স্থায়ী নদীশাসনের। তা না হলে, মানচিত্র থেকে বড়ুরিয়া নামের গ্রামটির অস্তিত্ব মুছে যাওয়াটা শুধুই সময়ের ব্যাপার।
১৭৩ বার পড়া হয়েছে