সদরঘাটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লঞ্চকর্মীদের সংঘর্ষ, আহত ৯

শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫ ৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
পুরান ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দরবন-১২ লঞ্চের কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত নয়জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত আটটার দিকে সদরঘাটের ১ নম্বর টার্মিনালে এ সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা লঞ্চটি ঘেরাও করে ভাঙচুর চালালে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হয় এবং সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কেবিন ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা, তারপর মারধর
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাবিল বরিশালগামী সুন্দরবন-১২ লঞ্চে ওঠেন। এসময় লঞ্চের কর্মীরা তাকে জোরপূর্বক কেবিন ভাড়া নিতে চাপ দেন। নাবিল রাজি না হলে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাকে মারধর করা হয়।
খবর পেয়ে তার সহপাঠী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও লঞ্চকর্মীরা লাঞ্ছিত করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহত ৯ শিক্ষার্থী, সুমনা হাসপাতালে চিকিৎসা
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন:
নাবিল (ফিন্যান্স, জবি)
শের আলী (আইএমএল, জবি)
ব্রজ গোপাল রায় (সংগীত, জবি)
জিলন (এমসিজে, জবি)
ইমরোজ সিদ্দিক (আইন, জবি)
আনিছ (থিয়েটার, জবি)
টিঙ্কু (ফিলোসফি, জবি)
মাকসুদুল হক (ইসলামিক স্টাডিজ, জবি)
রিহাব (কবি নজরুল কলেজ)
মুজাহিদ (সোহরাওয়ার্দী কলেজ)
তাদের সবাইকে সুমনা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ভাঙচুর ও আন্দোলন, লঞ্চ চলাচলে ব্যাঘাত
হামলার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সুন্দরবন-১২ লঞ্চ ঘেরাও করে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এতে সাময়িকভাবে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। বরিশালের যাত্রী রাজীব বলেন, “এক শিক্ষার্থীকে মারধরের পর আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই। এখন টিকিট কেটেও নিশ্চিত না, লঞ্চ ছাড়বে কি না।”
হামলায় কিরণ গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হামলায় সদরঘাটের ইজারাদার ও দক্ষিণাঞ্চল শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ কিরণ এবং তার সহযোগীরা—আজিজুল, রমজান, আনিছ, রফিক, কাদের, রাব্বি ও সাগর জড়িত ছিলেন।
চারজন আটক, দাবি মানার আহ্বান শিক্ষার্থীদের
ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং কোতোয়ালি থানা পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, “শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা থেকে ঘটনা শুরু হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি পাঁচ দফা
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. তাজাম্মুল হক। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং তারা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছেন। দাবি মানা হলেই পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো:
অভিযুক্ত কিরণকে দ্রুত গ্রেপ্তার
কিরণের সহযোগীদের গ্রেপ্তার
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ
শিক্ষার্থীদের মোবাইল, মানিব্যাগের ক্ষতিপূরণ
সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি ও কুলিদের অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ।
১০৬ বার পড়া হয়েছে