মুঠোফোনে অস্ত্রধারীদের ভিডিও করায় টার্গেট হন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান

শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫ ৪:১৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গাজীপুরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করেছিল, সেই সময় তার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছিলেন আসাদুজ্জামান। এই ঘটনাক্রমে তাকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার একটি দোকানের পাশে। নিহত আসাদুজ্জামান (৩৮) গাজীপুরের দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার রবিউল হাসান জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা গেছে যে, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা ধারালো দেশি অস্ত্র নিয়ে কাউকে ধাওয়া করছিল। এই দৃশ্যের ভিডিও করে আসাদুজ্জামান। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভিডিও করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে রাত ৬:৫৮ এর দিকে এক নারী হাঁটছেন। পেছন থেকে এক ব্যক্তি তাকে টেনে ধরেন। নারীর জোর করা দেখে ওই ব্যক্তি তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। তখনই ধারালো অস্ত্রধারী কয়েকজন যুবক ওই ব্যক্তিকে কোপানোর চেষ্টা করেন। সেই ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর সময় আসাদুজ্জামান তার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করতে থাকেন।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক শামীম হোসেন বলেন, “আমরা দুজন ওই এলাকার একটা দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, একজন নারী ও পুরুষ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যান। তখনই কয়েকজন অস্ত্রধারী আমাদের দিকে তাকিয়ে ‘এই পাইছি, তোরা আয়’ বলছিল। ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল, তখন তারা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ধাওয়া করে। তুহিন (আসাদুজ্জামান) মোবাইল বের করে তাদের পেছনে দৌড় দেন। পরে ওই অস্ত্রধারীরা হঠাৎ থেমে গিয়ে পেছনে তাকায়। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে তাদের একজনও দোকানে ঢোকে এবং তাকে কুপিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যায়। পরে আমি পুলিশকে ফোন করি, কিন্তু তখনো গাড়ি দেখতে পাইনি।”
প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ওই ঘটনার আগে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার একটি দোকানে ছিলেন আসাদুজ্জামান ও তার সহকর্মী শামীম। তারা বলছেন, সেই সময় এক নারী ও পুরুষ তাদের পাশ কাটিয়ে যান। এরপর কিছু ব্যক্তি দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ডেকে বলেন, “এই পাইছি, তোরা আয়।” ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে, তাকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত করেন ওই যুবকেরা। আহত ব্যক্তির নাম বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, “ওই মেয়ের সঙ্গে একটা টিম আছে। ওরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে।”
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুরের বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তার এলাকায় একটি ছিনতাই চক্র সক্রিয়। ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিরা সবাই এই চক্রের সদস্য বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। নারীকে ওই চক্রের একজন সদস্য হিসেবেও ধারণা করা হচ্ছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ফাঁদ পেতে এই চক্র ছিনতাই করে থাকে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার রবিউল হাসান বলেন, “আমরা ধারণা করছি, ভিডিওতে দেখা নারীকেও ছিনতাইকারী চক্রের একজন সদস্য হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।”
১১৯ বার পড়া হয়েছে