সর্বশেষ

সারাদেশ

কোমর তাঁতে স্বাবলম্বী ত্রিপুরা নারীরা, হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ঐতিহ্যবাহী শিল্প

মো.আরিফ, বান্দরবান 
মো.আরিফ, বান্দরবান 

বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫ ৬:২৬ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
পার্বত্য অঞ্চলের নারীদের জীবিকা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠেছে ‘কোমর তাঁত’। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই তাঁতশিল্প এখন ত্রিপুরা নারীদের স্বাবলম্বিতার প্রতীক।

নিজ ঘরে বসেই তাঁরা তৈরি করছেন রিনাই, থামি, ওড়না, মাফলারসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক। তবে পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তার অভাবে শিল্পটি টিকে থাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁতিরা।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের সিনাই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় ত্রিপুরা নারীরা কোমর তাঁতে কাপড় বুনতে ব্যস্ত। এই তাঁত একটি বিশেষ কাঠ ও বাঁশের কাঠি দিয়ে তৈরি, যা কোমরের সঙ্গে বেঁধে কাজ করতে হয় বলেই এর নাম 'কোমর তাঁত'। জুম চাষের পাশাপাশি অবসর সময় কাজে লাগিয়ে তাঁরা কাপড় বুনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এতে করে প্রতি মাসে একজন নারী ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছেন।

৪৮ বছর বয়সী রুস্মাইতি ত্রিপুরা ৩৪ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, "মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলাম এই কাজ। এখন গ্রামের অনেক নারী অর্ডার দিয়ে আমার কাছে পোশাক তৈরি করান। প্রতিটি রিনাই তৈরিতে ১৪-১৫ দিন সময় লাগে। ভালো মানের সুতায় একটি রিনাইয়ের দাম পড়ে ৪-৫ হাজার টাকা।"

রুস্মাইতির মতো আরও অনেকেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা বাজার থেকে সুতা, উলের সুতা বা পাহাড়ি তুলা সংগ্রহ করে নিজেরাই কাপড় তৈরি করেন। এই কাপড় নিজেরা ব্যবহার করার পাশাপাশি সাপ্তাহিক হাটে বিক্রিও করেন।

তবে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপণন ও বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকা। ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি সুনিল ত্রিপুরা জানান, "এই তাঁতে তৈরি পণ্য যেমন রিনাই (থামি), রিশা (ওড়না) ত্রিপুরা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এগুলোর বাণিজ্যিক প্রসারে কোনো সরকারি সহায়তা নেই। তাই এই শিল্প এখনো গৃহস্থলীর গণ্ডিতেই রয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারে কোমর তাঁতের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প।"

বর্তমানে বান্দরবান শহরের কিছু দোকানে এবং দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় কোমর তাঁতে তৈরি কাপড় বিক্রি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। ঢাকাসহ বড় শহরে চাহিদা থাকলেও বণ্টন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় শিল্পটি এগোতে পারছে না।

পাহাড়ি নারীদের জন্য কোমর তাঁত শুধু একটি আয়ের উৎস নয়, এটি তাদের আত্মপরিচয়েরও অংশ। প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ, সরবরাহ ও বিপণন কাঠামো এবং সরকারি সহায়তা— তবেই এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প বাঁচবে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে টিকে থাকবে।

১৫৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন