সর্বশেষ

জাতীয়

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫ ৬:০৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
দীর্ঘদিন স্থবির থাকা বাংলাদেশ-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিতে চলেছে। আগামী আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।

দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে সফরের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২২ বা ২৩ আগস্ট। সফরকালে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হতে পারে বলেও জানা গেছে কূটনৈতিক সূত্রে।

পাকিস্তান চায় এই সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে। বাংলাদেশ সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জানান, চলতি বছরের এপ্রিলে নির্ধারিত সফরটি সন্ত্রাসী হামলার কারণে স্থগিত হলেও এবার সফর বাস্তবায়নে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।

ঢাকায় অবস্থানকালে ইসহাক দার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। এর আগে নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে দারের সঙ্গে তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাতে এই সফর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে দার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সহজীকরণ ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেন।


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের কিছু অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে—যেমন, পাকিস্তান থেকে পণ্যবাহী জাহাজের সরাসরি আগমন, ভিসা ফি প্রত্যাহার, প্রক্রিয়াগত শিথিলতা এবং সরাসরি বিমান চলাচলের উদ্যোগ। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশিদের ভিসা প্রদানে নীতিগত ছাড় দেয়।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রায় ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। সেখানে পাকিস্তানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। বিশ্লেষকেরা এ বৈঠককে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পথে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।

তবে এই অগ্রগতির মধ্যেও কিছু অমীমাংসিত ঐতিহাসিক ইস্যু রয়ে গেছে—বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ, আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা ও দুর্যোগকালে বাংলাদেশের হয়ে পাওয়া বিদেশি সহায়তা ফেরতের বিষয়গুলো এখনও সমাধান হয়নি।


এই সফরে এসব ইস্যু আলোচনায় আসবে কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক কূটনীতিক জানান, বিষয়গুলো এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে, তবে কোনটি আলোচিত হবে তা নির্ভর করবে বৈঠকের বাস্তব পরিস্থিতির ওপর। তবে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তা আলোচনায় স্থান পাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বারবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী হলেও ইতিহাস ভুলে যাওয়ার কোনো বার্তা দেয়নি। বরং, '৭১-এর সত্যকে সামনে রেখেই সুসম্পর্ক গড়ার পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে এক বৈঠকে ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গ তোলেন ইউনূস, যা দেশি-বিদেশি মহলে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক জটিলতা নিরসনের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। কৌশলী ও দৃঢ় কূটনীতির মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

সাবেক এক হাইকমিশনার মন্তব্য করেন, “ভারতের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখা যায়, পাকিস্তানের সঙ্গেও তেমন সম্পর্ক সম্ভব—শুধু প্রয়োজন সাহসী কূটনৈতিক অবস্থান।” তিনি আরও বলেন, “এখন সময় অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের পথে এগোনোর।”

১১৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন