রিয়াদের স্বীকারোক্তি: "গরিবের ছেলে, টাকার লোভ সামলাতে পারিনি"

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫ ৫:৩২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রিয়াদ তার জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ও একই সংগঠনের আরেক বহিষ্কৃত নেতা জানে আলম অপু মিলেই ভুক্তভোগী পক্ষের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। তিনি জানান, “আমি গরিবের ছেলে। টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।”
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালতে রোববার রিয়াদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানের নেপথ্য কাহিনি
রিয়াদ জানান, ১৭ জুলাই রাতে গুলশান থানায় অভিযানে সহযোগিতা করতে তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জুর ফোনে গুলশান জোনের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদ তার নিজ বাসায় অবস্থান করছেন।
ডিসির পরামর্শে ওসি-র সঙ্গে আলোচনা করে রিয়াদসহ সাত-আটজন রাত ২টার দিকে গুলশান থানায় যান। পরে পুলিশি অভিযানে অংশ নিলেও শাম্মী আহমেদকে বাসায় না পেয়ে তারা ফিরে আসেন।
এয়ারপড ফেরতের অজুহাত, তারপর অর্থ লেনদেন
রিয়াদের জবানবন্দিতে উঠে আসে অভিযানের পর অপু তাকে জানায়, তিনি শাম্মীর বাসা থেকে একটি এয়ারপড নিয়ে এসেছেন। পরে সকাল ১০টার দিকে দুজনে সেটি ফেরত দিতে আবার বাসায় যান। তখন অপু শাম্মীর স্বামীকে ভয় দেখিয়ে বলেন, “শাম্মী বাসায় থাকলে আমরা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেব।” ভীত হয়ে শাম্মীর স্বামী ১০ লাখ টাকা তাদের দেন।
পরবর্তীতে চাঁদার বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায়ের জন্য রিয়াদ তার সহযোগীদের আবারও ওই বাসায় পাঠান। তিনি নিজে গুলশান মোড়ে অবস্থান করেন। পুলিশের ফাঁদে পড়ে তিনি নিজেও বাসায় গিয়ে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন।
কারাগারে প্রেরণ
সেদিন রিয়াদসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে রিয়াদ স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকিদের—ইব্রাহিম হোসেন, সাদাকাউম সিয়াম ও সাদমান সাদাব—কারাগারে আটক রাখার আবেদন মঞ্জুর হয়।
অপরদিকে মামলার অন্যতম আসামি জানে আলম অপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে রয়েছেন।
অপুর অতীত ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গ্রেফতার হওয়া জানে আলম অপু জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পুনঘরদীঘি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গ্রিন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র। তার রাজনৈতিক যাত্রা ছাত্রদল দিয়ে শুরু হলেও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে বহিষ্কৃত হন। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, অপু একাধিক রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে এলাকায় বদনাম করেছে।
স্থানীয়রা জানান, অভ্যুত্থানের কয়েকদিন পর তিনি এলাকায় দামি প্রাইভেটকার নিয়ে যান, যা তাদের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে। পরিবারের সদস্যরাও জানান, অপু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না এবং ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনেছেন।
১১৮ বার পড়া হয়েছে