মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার শুরু, প্রথম সাক্ষ্য সাবেক আইজিপি

রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫ ৬:২৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
রোববার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে এ বিচার কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করছে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন দোষ স্বীকার করে ইতোমধ্যে রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আবেদন করেছেন, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছে।
এদিন সকাল ১০টায় মামলার প্রথম সাক্ষ্য দিতে সাবেক আইজিপিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে গাজী এমএইচ তামিম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
মামলার প্রধান অভিযোগসমূহ:
উসকানিমূলক বক্তব্য ও গণহত্যা:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী ছাত্রদের “রাজাকারের বাচ্চা” বলে উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী কর্মীদের মাধ্যমে সংগঠিত আক্রমণে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা নিহত এবং ২৫ হাজার আহত হন।
মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ:
শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি।
রংপুরে ছাত্র হত্যা:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও তিন আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চানখাঁরপুলে গণহত্যা:
চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে শেখ হাসিনা ও অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে।
আশুলিয়ায় পুড়িয়ে হত্যা:
আশুলিয়ায় ছয় নিরীহ আন্দোলনকারীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগও মামলার অংশ।
ট্রাইব্যুনালের মতে, এসব অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে 'সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি' অর্থাৎ নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতার আওতায় বিচার চলছে।
এর আগে, গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া, গুম, খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৪ আগস্ট।
অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান নিয়েও দায়ের হওয়া মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১২ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এ ঘটনার পর এটি প্রথম মামলা, যেখানে আদালতের রায়ে শেখ হাসিনার শাস্তি হয়েছে।
১২০ বার পড়া হয়েছে