প্রবাস

লিবিয়ায় সাত মাস ধরে বন্দি তিন যুবক, মুক্তিপণে দাবি ২০ লাখ টাকা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার তিন তরুণ দীর্ঘ সাত মাস ধরে লিবিয়ার মানবপাচারকারী মাফিয়াদের হাতে জিম্মি রয়েছেন।

পরিবারের সদস্যদের সামনে ভিডিও কলে নির্যাতনের দৃশ্য দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে পাচারচক্রটি। প্রতিজনের মুক্তির বিনিময়ে দাবি করা হচ্ছে ২০ লাখ টাকা করে। এ সময় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলাও করেছে চক্রটি।

জানা গেছে, শ্যামনগরের জয়াখালী গ্রামের রেজওয়ান করিমকে (২৪) ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন একই উপজেলার দাতিনাখালী গ্রামের দুবাই প্রবাসী মুকুল সানা। সরাসরি বিমানপথে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুরো অর্থও আদায় করা হয়।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রেজওয়ানকে ঢাকা থেকে শ্রীলংকা, পরে দুবাই ও মিশর ঘুরিয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। ত্রিপোলিতে পৌঁছানোর পর চক্রের সদস্যরা তাকে তুলে দেয় স্থানীয় সশস্ত্র মাফিয়াদের হাতে। এরপর থেকে নানা সময় তাকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে সেই ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।

রেজওয়ানের পরিবার জানায়, এরই মধ্যে তারা নির্যাতন বন্ধের আশায় সাত লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। এখন আবার নতুন করে দাবি করা হয়েছে আরও ২০ লাখ টাকা।

একই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন উপজেলার রমজান হোসেন (২৩) ও আবু শহিদ (৩৫) নামের আরও দুই যুবক। তাদের বাড়ি দাতিনাখালী ও পশ্চিম কৈখালী গ্রামে। জানা যায়, শ্যামনগর থেকে একসঙ্গে চারজনকে নেওয়া হলেও নিকটাত্মীয় মামুন হোসেনকে ইতালি পাঠানো হয়, আর বাকি তিনজনকে বিক্রি করে দেওয়া হয় মাফিয়াদের কাছে।

ভুক্তভোগীদের পরিবারের হাতে আসা ভিডিওতে দেখা গেছে, হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে বন্দিদের। একজন বলছেন, "ওরে আল্লাহ গো, আমরা গরিব মানুষ", আরেকজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রাণভিক্ষা চাইছেন।

রমজানের বোন হামিদা জানান, ভাইকে বিদেশ পাঠাতে জমিজমা বিক্রি করে ও ঋণ নিয়ে টাকা জোগাড় করা হয়। বিভিন্ন সময় মুকুল, তার স্ত্রী হালিমা ও শ্যালক শাহিনুরের হাতে মোট ১৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরে মুক্তির আশায় আরও তিন লাখ টাকাও আদায় করে তারা। এখন আবার ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।

রেজওয়ানের বাবা আশরাফ হোসেন জানান, সর্বশেষ ১১ দিন আগে ছেলের সঙ্গে কথা হয়। ভিডিও কলে দেখা যায়, রেজওয়ানকে পিছমোড়া করে ধরে রেখে পিটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, "সবকিছু বিক্রি করে এতদিন চেষ্টা করেছি, এখন আর আমাদের পক্ষে কোনো টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। ছেলেকে আর একবার দেখতে চাই, এই শেষ ইচ্ছাটুকু যেন পূরণ হয়।"

ঘটনার পর গত ৬ জুন রমজান হোসেনের বাবা খলিলুর রহমান পাচারচক্রের মূল হোতা মুকুলসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে মাফিয়ারা রমজানের পরিবারের সদস্যদের নামে তিনটি মিথ্যা মামলা করে।

পাচারচক্রের শ্যালক শাহিনুর দাবি করেছেন, তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। অন্যদিকে, মুকুলের স্ত্রী হালিমা জানান, মাফিয়াদের হাতে আটক হওয়ার পর থেকে তার স্বামীর সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে জামিনে ছাড়া পেয়ে কেউ যদি হুমকি দিয়ে থাকে, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আইনি সহায়তা ও অভিবাসন সংক্রান্ত সহায়তাকারী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

১১৭ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
প্রবাস নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন