ডা. শফিকুরের হার্টে সফল অপারেশন: দেশের চিকিৎসকদের সক্ষমতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫ ৯:১০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শনিবার সকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ৮টায় এ অপারেশন শুরু হয়। মাত্র কিছুদিন আগে, ১৯ জুলাই ২০২৫, জাতীয় সমাবেশ চলাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার হৃদযন্ত্রে পাঁচটি ব্লক ধরা পড়ে, যার কয়েকটি ছিল গুরুতর। এরপর দেশের চিকিৎসকদের ওপর বিশ্বাস এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে হয় এই গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি। অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি।
দেশের চিকিৎসকদের অতীতের বড় সাফল্যের কয়েকটি উদাহরণ; ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দূর-নিয়ন্ত্রিত রোবটের মাধ্যমে এক রোগীর হার্টে সফলভাবে রিং প্রতিস্থাপন করেন ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার ও তার বিশেষজ্ঞ টিম। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ অর্জনকে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী ধাপ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ভারত, দ্বিতীয় চীন, তৃতীয় বাংলাদেশে এ ধরনের চিকিৎসা শুরু হয়।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভুটানের নাগরিক কারমা দেমার নাক পুনর্গঠনের জটিল অপারেশন সফলভাবে করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা। ভারতের দুটি অপারেশন ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশে এসে তিনি সফলতা পান, এতে বিদেশি রোগীদের বিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে হৃদরোগ চিকিৎসায় ৯৫-৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব—আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এখন প্রতিবছর হাজার হাজার জটিল হার্টের সার্জারি দেশেই সফলভাবে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতে বিগত কয়েক দশকে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে। একইসাথে, জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে পোলিওমুক্ত দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
তথ্যসূত্র থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের চিকিৎসকদের হাতে এখন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নের অসংখ্য নজির রয়েছে, যেগুলো দেশের ভেতরে থেকেই বিশ্বের সঙ্গে অনায়াসে প্রতিযোগিতা করতে পারছে।
ডা. শফিকুর রহমান তার আর্থিক সচ্ছলতা সত্ত্বেও বিদেশে চিকিৎসায় যেতে রাজি হননি; বরং দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রেখে দেশেই চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার এই পদক্ষেপ বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ও বিশেষায়িত চিকিৎসা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। ড. শফিকুর রহমানের অপারেশনের মতো ঘটনাগুলো বারবার প্রমাণ দেয়—বিশ্বাস ও আস্থায় ভর করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাই হতে পারে সকলের গর্ব ও নিরাপত্তার জায়গা।
আরো একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মাদের ক্ষেত্রে। একসময় তার হৃদযন্ত্রের জটিলতায় বিদেশে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। তবে তিনি দেশ ছেড়ে যাননি; বরং স্বীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মালয়েশিয়াতেই সেই চিকিৎসা সুবিধা গড়ে তোলেন এবং সেখানেই চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তার এই সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ার চিকিৎসা খাতে আকর্ষণীয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবায় আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেশবাসী ও নীতিনির্ধারকদের জন্য পরিষ্কার বার্তা—উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। চিকিৎসকদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, দক্ষতা অর্জন এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আস্থার গুরুত্ব এ ঘটনাগুলো নতুনভাবে সামনে আনলো।
১৫৫ বার পড়া হয়েছে