আন্তর্জাতিক

গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের বর্ণনা দিলেন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫ ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে শিশু আমির। মাত্র ১২ কিলোমিটার হেঁটে এসে কিছু খাবার সংগ্রহ করেছিল সে।

খাবার নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারায় এই শিশুটি।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখার সাবেক কর্মকর্তা অ্যান্টনি আগুইলার। সম্প্রতি বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) থেকে পদত্যাগের পর তিনি ‘আনঅ্যাক্সেপ্টেবল’ নামের একটি পডকাস্টে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

আগুইলার বলেন, “আমির ছেঁড়া জামা গায়ে, খালি পায়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। ক্ষুধার্ত, দুর্বল শরীর নিয়ে সে আমাদের দেওয়া সামান্য খাবার পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। এমনকি আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলেছিল, ‘থ্যাংক ইউ’। কয়েক মিনিট পরই গুলিবর্ষণ শুরু হয়। আমির সেই গুলিতে নিহত হয়।”

তিনি জানান, ঘটনার দিন, গত ২৮ মে, দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তখনই ইসরায়েলি বাহিনী মরিচের গুঁড়া, স্টান গ্রেনেড এবং গুলি ছুড়ে ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়।

এক হাজারের বেশি নিহত ত্রাণ নিতে গিয়ে
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, জিএইচএফ চালু হওয়ার পর মাত্র এক মাসেই ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিকে ‘স্কুইড গেম’-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়, যেখানে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হয় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে।

“তারা মানুষ, পশু নয়”—কান্নাজড়িত স্বরে আগুইলার
সাবেক এই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, “আমি গাজায় ছিলাম। আমি তাদের ছুঁয়ে দেখেছি, কথা বলেছি। তারা মানুষ—পশু নয়। অথচ তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে যেন তারা পশু। এমনকি আত্মসমর্পণ করা আইএস যোদ্ধাদের থেকেও গাজার সাধারণ মানুষকে কম সম্মান দেখানো হচ্ছে।”

নজিরবিহীন দুর্ভিক্ষ, চরম অপুষ্টিতে শিশুদের মৃত্যু
জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজার অধিকাংশ এলাকায় খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, যা এখন দুর্ভিক্ষের পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে অন্তত একটি শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫০ শিশুসহ বহু মানুষের।

“মানবিক সহায়তাও যুদ্ধের অস্ত্র হয়ে উঠেছে”
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি এই সংকটকে ‘মানবসৃষ্ট এবং পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, “ত্রাণ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে।”

৬০ হাজারের বেশি নিহত, আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ এই ঘটনার বিবরণকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থা গাজায় অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালেও, পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং ত্রাণ কর্মীরাও এখন দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএর কর্মকর্তারা।

১২০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন