ভিআইপি আসামিদের নিরাপত্তায় কেরানীগঞ্জে বিশেষ কারাগার চালু

বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ ৬:৩৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হওয়া দুই শতাধিক ভিআইপি আসামির মধ্যে ৫৯ জনকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে আলাদা রাখা হয়েছে।
এ জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বিশেষ একটি কারাগার প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র এই ৫৯ জন ভিআইপি আসামিকে রাখা হচ্ছে।
কারা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এসব ভিআইপি আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, উচ্চপদস্থ আমলা এবং হেভিওয়েট নেতাকর্মীরা রয়েছেন। তারা সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও রোষানলের শিকার হওয়ার কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে কারাগারের প্রাঙ্গণ ও ক্যান্টিনে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে তাদের মিলিত হওয়া থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, কারণ পূর্বেও এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, ২১ জুন থেকে কেরানীগঞ্জের ওই বিশেষ কারাগার চালু হয়েছে। মূলত নারীদের জন্য নির্মিত কারাগারটি সংস্কার করে ডিভিশনপ্রাপ্ত ৫৬ জন আসামি ও নিরাপত্তার কারণে ৩ জন এমপিকে রাখা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো সাধারণ কয়েদি নেই এবং কারারক্ষীদের কঠোর নির্বাচনের মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই এবং আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতাও নেই।
বিশেষ কারাগারে রাখা তালিকাভুক্ত এসব কয়েদি হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পার্বত্যবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
এ ছাড়া জনরোষে নিরাপত্তা শঙ্কায় থাকা আরও ১৮ এমপি রয়েছেন। তারা হলেন সাবেক এমপি সাদেক খান, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, হাজী সেলিম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আলী আজম মুকুল, কাজী জাফর উল্যাহ, শাহজাহান ওমর, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, শাহে আলম তালুকদার, নাসিমুল আলম, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, কামরুল আশরাফ খান পোটন, গোলাম কিবরিয়া টিপু, আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, মোরশেদ আলম ও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব কারাগারে বর্তমানে প্রায় ৭৭ হাজার ৮০০ কয়েদি রয়েছেন, যার মধ্যে পুরুষ কয়েদি ৭৫ হাজার ৭১ জন এবং নারী কয়েদি ২ হাজার ৭৩২ জন। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে ৮ হাজার ৫০১ এবং কাশিমপুর কারাগারে ৭ হাজার ৫০০ কয়েদি।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারে ভিআইপি আসামিদের মধ্যে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক এমপি মমতাজ বেগম, সাবেক এমপি মাসুদা সিদ্দিক রোজী, সাবেক এমপি সাফিয়া খাতুন এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র আইভি রহমান রয়েছেন। তবে আলোচিত ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার ও সাংবাদিক ফারজানা রুপা ডিভিশনপ্রাপ্ত না হওয়ায় সাধারণ কয়েদিদের মতো সেবা পাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, “এসব আসামিদের প্রতি সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ঘৃণা ও রোষানল রয়েছে, কারণ তারা বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের সাথে যুক্ত। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র সকল আসামিকেই নিরাপত্তা প্রদান করতে বাধ্য এবং বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।”
এই বিশেষ কারাগার ব্যবস্থা ভিআইপি আসামিদের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে এবং কারাগারে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
১৩৯ বার পড়া হয়েছে