তারেক রহমানের ‘জিরো টলারেন্স’ বার্তা ও নিচে নেমে আসা আত্মশুদ্ধির হাওয়া

বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ ৫:১৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের মূলধারার প্রধান দল বিএনপি গত এক বছরে চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ এবং নানা অভিযোগে বহু নেতাকর্মী নিহত ও বহিষ্কৃত হয়েছেন।
তবে এই সংকটের মধ্যেও মিলে যাচ্ছে আত্মশুদ্ধি ও নেতৃত্বের ইতিবাচক বার্তা, যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শুদ্ধির প্রয়াস।
সংঘর্ষ ও হতাহতের ভয়াবহ পরিসংখ্যান
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বিএনপিতে ২৯১টি অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে ৭৪ জন নেতাকর্মী নিহত এবং তিন হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। মৃত্যু ও সহিংসতার অধিকাংশ ঘটেছে আধিপত্য বিস্তার, বাজার ও পরিবহন টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ ও দলীয় প্রোগ্রামে বিরোধের কারণে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।এক বছরে দলে অন্তত ৪,০০০–৯,০০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে, অনেক জেলা ও মহানগর কমিটি স্থগিত কিংবা ভেঙে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে গভীর দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও নেতৃত্বের সংকট দায়ী।
কুষ্টিয়ায় ‘অভিযোগ বক্স’: অভিনব কর্তৃত্ব ও জবাবদিহিতা
এই প্রেক্ষাপটে কুষ্টিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা ও দলে আত্মশুদ্ধি আনতে প্রেসক্লাব চত্বরে একটি ‘অভিযোগ বক্স’ স্থাপন করে জেলা বিএনপি। সাধারণ নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা চাইলে এতে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিতে পারেন—নাম প্রকাশে আপত্তি থাকলে পরিচয়ও গোপন রাখা হচ্ছে। এখানেই ‘গণতন্ত্র চর্চা’ এবং ‘নেতৃত্বের জবাবদিহিতা’র দৃষ্টান্ত স্থাপনের ইতিবাচক বার্তা খুঁজে পাওয়া যায়।
এমন উদ্যোগ নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত চারটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে—শহরের টার্মিনালে ট্রাকপ্রতি চাঁদা আদায়, স্পোর্টিং ক্লাব দখল, নির্দিষ্ট সংঘবদ্ধ দলের বিরুদ্ধে কলোনিতে চাঁদা দাবি এবং হত্যা মামলার স্বাক্ষীকে হুমকির অভিযোগ, এসব অভিযোগের সাথে দলের পদধারী নেতাদের নাম পর্যন্ত রয়েছে। গত বুধবার(৩০ জুলাই) দুপুরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে বক্সটি খুলে অভিযোগ পড়ে শোনান কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। জেলা নেতৃত্ব দ্রুত গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগগুলো পড়ে শুনিয়ে স্পষ্ট করেন—“অপরাধী যেই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।
নেতৃস্থানীয় নেতৃত্বে আশার ইঙ্গিত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগস্টের পর দৃঢ় ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন। দলের ভেতরের সংঘাত, অনৈক্য ও অনিয়ম প্রতিরোধে “শূন্য সহনশীলতা” নীতিতে অটল থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন — যেমন, সংগঠনের পুনর্গঠন, দায়িত্বশীল বক্তব্য ও সাংগঠনিক ঐক্যবদ্ধতা। দলের সিনিয়র নেতারা স্পষ্ট করেন, পরিবর্তনের এই উদ্যোগে তারেক রহমানের ভূমিকা মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নতুনভাবে উৎসাহিত করেছে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
এতসব সঙ্কট ও সংস্থার ভেঙে-গড়ার মধ্যেও বিএনপি নতুন নেতৃত্ব, সাংগঠনিক সংস্কার, দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার নতুন ধারণা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বহিষ্কার-শাস্তি এবং জবাবদিহির এ সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ও গণতান্ত্রিক দল গড়ে উঠবে।
“দল যাদের নিয়ে বারবার বিতর্কে পড়েছে, তাদের শাস্তি ও বহিষ্কারের পদক্ষেপ—এটাই এখনকার বিএনপির মুখ্য চিত্র। একইসঙ্গে কড়া নেতৃত্ব ও মাঠপর্যায়ে আত্মসমালোচনার সংস্কৃতি নতুন বিএনপির ইঙ্গিত।”
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
১৬৫ বার পড়া হয়েছে