আন্তর্জাতিক

বিশ্বের ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প রাশিয়ায়, উপকূলে সুনামির আঘাত

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ ৪:৫০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে আঘাত হেনেছে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার এক ভয়াবহ ভূমিকম্প, যা গত এক দশকের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এতে পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে সুনামির আশঙ্কা। হাওয়াই, জাপান, চিলিসহ অন্তত ১৫টি দেশ ও অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ মানুষকে।


কামচাটকায় ভয়াবহ কম্পন ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
রুশ ভূতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, ১৯৫২ সালের পর এই অঞ্চল এমন শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখে পড়েনি। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহর থেকে প্রায় ১২৬ কিলোমিটার দূরে এবং এর গভীরতা ছিল ১৮ কিলোমিটার। ভূমিকম্পের পরপরই কামচাটকার ক্লিউচেভস্কয় আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়, যা ইউরেশিয়ার সবচেয়ে উঁচু সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসেবে পরিচিত।

কামচাটকার গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ বলেন, “কম্পনটি এতটাই তীব্র ছিল যে মনে হচ্ছিল দেয়াল যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে।” ভূমিকম্পটি প্রায় তিন মিনিট ধরে স্থায়ী ছিল।

সুনামির ছোবলে উপকূলের ক্ষয়ক্ষতি
ভূমিকম্পের পর কামচাটকার আশপাশের দ্বীপগুলোয় ৫ মিটার পর্যন্ত সুনামির ঢেউ আঘাত হানে। উপকূলীয় এলাকা পানির নিচে চলে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক স্থাপনা ও জাহাজ। সবচেয়ে বড় ঢেউ রেকর্ড করা হয় উত্তর কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সেভেরো-কুরিলস্কে। ফরাসি পলিনেশিয়ার কিছু অঞ্চলে ৪ মিটার পর্যন্ত ঢেউয়ের সতর্কতা জারি করা হয়।

বিশ্বজুড়ে সতর্কতা, বহু এলাকা খালি
ভূমিকম্পের পর জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়, যদিও কেন্দ্রটিতে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। জাপানে সুনামি আশঙ্কায় অন্তত ২০ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। হাওয়াইতে ৫.৫ ফুট এবং জাপানে ৪.৩ ফুট উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানে। ক্যালিফোর্নিয়া ও কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতেও ছোট ঢেউ অনুভূত হয়।

এদিকে, মিয়ে প্রদেশে এক নারী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময়। জাপানের বহু এলাকায় রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, বিপর্যস্ত হয় জনজীবন।

সাবডাকশন জোনে মেগাথ্রাস্ট ভূমিকম্প
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ভূমিকম্পটি ‘মেগাথ্রাস্ট’ ধরনের, যা সাধারণত একটি টেকটোনিক প্লেট অন্যটির নিচে সরে গেলে ঘটে। ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক রজার মাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চল ‘প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার’-এর অন্যতম সক্রিয় অংশ এবং প্রতি বছর প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি প্রায় ৮ সেন্টিমিটার গতিতে পশ্চিমে সরছে। এই ধরণের সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক গতিবিধির কারণেই এমন ভয়াবহ কম্পনের সৃষ্টি হয়।

প্রাণহানি কম, তবু ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য
রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে দূরবর্তী ও কম জনবহুল এলাকা থেকে ভবন ক্ষতি ও আহতের তথ্য পাওয়া গেছে। শক্তিশালী অবকাঠামো এবং দ্রুত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

সন্ধ্যার পর অনেক এলাকায় সুনামি সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়, তবে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপাঞ্চলগুলোর কিছু অংশে এখনও সতর্কতা জারি আছে।

১২৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন