৪৪তম বিসিএসে পদ শূন্য ও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন উত্তেজনা

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫ ৬:২৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক প্রকাশিত ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে মোট ১,৬৯০ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ৮০০ জন একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশ পেয়েছেন, যাদেরকে ‘রিপিট ক্যাডার’ হিসেবে ধরা হচ্ছে। পিএসসি দাবি করেছে, এই সংখ্যাটি আসলে ৪২৪ জনের বেশি নয়।
পিএসসির তথ্যানুযায়ী, গেজেট প্রকাশের পর ৪৪তম বিসিএসে ৪২৪টি পদ শূন্যই থেকে যাবে, যা নিয়ে প্রার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ চার বছর ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলার পর পদ শূন্য রাখা যৌক্তিক নয়। তারা দাবি করেছেন, রিপিট ক্যাডার প্রার্থীদের তথ্য নিয়ে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করা হোক এবং নন-ক্যাডার প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের ক্যাডার পদে নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। পাশাপাশি ক্যাডার পদ বৃদ্ধিরও দাবি জানানো হয়েছে।
ফল সংশোধনের প্রস্তুতি
চাকরিপ্রার্থীদের তীব্র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পিএসসি ফল সংশোধনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। অনুমোদন মিললে, ৪৪তম বিসিএসের সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে, যা অনেক প্রার্থীর ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
বিধি সংশোধনে উদ্যোগ
পিএসসি রিপিট ক্যাডার বন্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিধিমালা ২০১৪-এর বিধি-১৭-এ অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন বিধি অনুযায়ী, যেসব প্রার্থী একই ক্যাডারে পুনরায় মনোনীত হবেন এবং যোগ দিতে অনিচ্ছুক, তাদের সুপারিশ করা হবে না। এছাড়া, নতুন করে একটি সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ করা হবে, যেখানে অন্য প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হবে।
পিএসসির বক্তব্য, রিপিট ক্যাডারের কারণে নতুন ও অপেক্ষমান মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই
পিএসসি গুগল ফর্মের মাধ্যমে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে। বর্তমানে ৪২৪ জনকে রিপিট ক্যাডারে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, যদিও এই সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সংশোধিত ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষা
সংশোধিত ফলাফল প্রায় প্রস্তুত, তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন মেলে সংশোধিত বিধি অনুসারে নতুন করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে, যা ক্যাডার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনবে।
মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা ও সময়সীমা
প্রস্তাবিত বিধি সংশোধনের অনুমোদন এখনও মন্ত্রণালয় থেকে আসেনি। বেশ কয়েক দফায় আলোচনা হলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে যাতে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা না সৃষ্টি হয়।
পদবৃদ্ধির দাবি ও আন্দোলন
৪৪তম বিসিএসে পদ বাড়ানো হয়নি বরং কিছু পেশাগত পদ শূন্য রাখা হয়েছে, যা নিয়ে প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ। তারা বিভিন্ন কর্মসূচি, মানববন্ধন ও অনশন চালিয়ে ক্যাডার পদ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন। গত বিসিএসগুলোতে পদ বৃদ্ধি হলেও এ বারে এমন ঘটেছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৮০০ পদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু তা যথাযথভাবে গ্রহণ হয়নি এবং একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
পিএসসির অবস্থান
পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, সকল আইন ও বিধি মেনে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। তবুও প্রার্থীদের দাবির কথা বিবেচনা করে রিপিট ক্যাডারের তথ্য সংগ্রহ ও বিধি সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিললে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
পিএসসি পদ বৃদ্ধি বিষয়ে জানায়, পদ সংখ্যা নির্ধারণ ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যাপারে তারা সরকারের নির্দেশনা মেনে কাজ করে। এখন পদ বৃদ্ধি নিয়ে সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে।
১২৬ বার পড়া হয়েছে