জাতীয়

বিশ্ব বাঘ দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫ ৫:২৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
আজ, ২৯ জুলাই, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হচ্ছে, কারণ বাঘ শুধু একটি প্রাণী নয়—এটি দেশের জাতীয় পশু, ক্রিকেট দলের প্রতীক ‘টাইগার’, সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লোগোতেও স্থান পেয়েছে।

এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’। প্রতিপাদ্যটিই বলে দেয়, বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৫ সালের জরিপে যেখানে বাঘ ছিল ১০৬টি, ২০১৮-তে তা দাঁড়ায় ১১৪-এ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জরিপে সুন্দরবনে ১২৫টি বাঘ শনাক্ত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক বার্তা। তবে চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে।

সুন্দরবনের একমাত্র আশ্রয়ে বাঘ, হুমকি রয়ে গেছে হরিণ শিকার
বাঘ টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের খাদ্য—বিশেষ করে হরিণ। কিন্তু সুন্দরবনের হরিণও রয়ে গেছে চোরাশিকারিদের নিশানায়। গত ১৭ জুলাই, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ি সদস্যরা একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ১০ কেজি হরিণের মাংসসহ দুইজনকে আটক করে। বস্তায় লেখা ছিল ঢাকার প্রাপকের নাম ও ফোন নম্বর—এ থেকেই স্পষ্ট, এই চাহিদা শহরের দিকেই।

যত দিন না শহরের ভোক্তা এই চাহিদা থেকে ফিরে আসে, তত দিন চোরাশিকার বন্ধ হওয়া কঠিন—এমন মত বন বিভাগের সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু দায় গিয়ে পড়ে বন বিভাগের ওপরেই, ভোক্তা সমাজ থেকে জবাবদিহিতা চাওয়া হয় না।

বন নয়, খামারে হরিণ—কিন্তু কাদের জন্য?
দেশে এখন অনেক হরিণ খামার গড়ে উঠেছে। উদ্দেশ্য ছিল, খামারে হরিণ লালন-পালন করলে বন থেকে চাপ কমবে। কিন্তু বাস্তবে এটি নিয়েও আছে প্রশ্ন। এসব খামারের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, উদ্দেশ্য ও তদারকি নিয়ে সংশয় আছে। উল্লেখ্য, ভারতে বন্যপ্রাণীর খামার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এমনও প্রশ্ন উঠেছে, যদি বনে শিকার বন্ধ না হয়, তাহলে খামারের যৌক্তিকতাই বা কোথায়? অনেকে বলছেন, এই খামারগুলোর পেছনে কিছু ‘শৌখিন’ মানুষের আগ্রহ কাজ করেছে।

আইনজ্ঞান থাকা সত্ত্বেও শিকার চলছে
এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষ জানেন, হরিণ শিকার ও মাংস ভক্ষণ অবৈধ। তবুও তাঁরা শিকার বা কেনা-বেচায় জড়াচ্ছেন। কারণ, এটি অনেক সময় অন্য মাংসের তুলনায় সস্তা, কেননা এটি ক্রয় করতে হয় না—শিকার করলেই পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যেভাবে চাহিদা বাড়ছে এবং শিকার চলছে, তাতে করে ‘ঘুঘুর মতো দেখতে’ প্যাসেঞ্জার পিজনের মতোই হারিয়ে যেতে পারে হরিণও। প্যাসেঞ্জার পিজন একসময় ছিল ৩০০-৫০০ কোটির মতো, এখন তা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত।

বাঘ বাঁচলে বাঁচবে সুন্দরবন, আর সুন্দরবন বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘ হচ্ছে সুন্দরবনের কিস্টোন প্রজাতি—এর মানে, বাঘ টিকে থাকলে পুরো বাস্তুতন্ত্রও টিকে থাকবে। সুন্দরবন ঘিরে থাকা মানুষদের মতে, এই বন তাঁদের ‘মায়ের মতো’—ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে, খাদ্য জোগায়।

বাঘ রক্ষায় বন বিভাগ ও ওয়াইল্ডটিম–এর সহায়তায় কাজ করছেন ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (VTRT)–এর ৪৫০ জন সদস্য। তাঁরা স্থানীয়ভাবে পরিচিত বাঘবন্ধু বা টাইগার স্কাউট নামে। এঁরা নিরলসভাবে কাজ করছেন বাঘ-মানুষ সংঘাত কমাতে।

জাতীয় সুখের সঙ্গে সম্পর্ক বাঘের অস্তিত্বের
ভুটানের উদাহরণ টেনে গবেষকরা বলছেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিও জাতীয় সুখ সূচকের একটি উপাদান হতে পারে। সুন্দরবনের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে—এভাবেই গঠিত হবে একটি সুখী ও টেকসই বাংলাদেশ।

১১৭ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন