নিউইয়র্কে বন্দুক হামলায় বাংলাদেশিসহ ৪ জন নিহত

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫ ৪:৪২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে একটি ভয়াবহ বন্দুক হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন।
নিহত বাংলাদেশি ব্যক্তি নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের একজন ছুটিতে থাকা কর্মকর্তা ছিলেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার নিউইয়র্কের একটি অফিস ভবনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী পরে নিজেই আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত বাংলাদেশি কর্মকর্তার নাম দিদারুল ইসলাম (৩৬)। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে তিনি তিন বছর ছয় মাস কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা এবং তার দুটি ছোট সন্তান রয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, "তিনি বেঁচেছিলেন একজন বীরের মতো, এবং বিদায়ও নিয়েছেন বীরোচিতভাবে।"
এ ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস। তিনি বলেন, "পাঁচজন নিরপরাধ মানুষকে গুলি করা হয়েছে।"
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী ব্যক্তি শেন তামুরা নামে এক লাস ভেগাসবাসী। তার মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে হামলার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়।
সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, শেন একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে নেমে এম৪ রাইফেল হাতে ভবনের দিকে এগিয়ে যান। ভিতরে ঢুকেই তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করেন এবং আশ্রয় নেওয়া এক নারীকেও লক্ষ করে গুলি ছোড়েন। এরপর লবিতে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন।
পরবর্তী সময়ে বন্দুকধারী ভবনের এলিভেটরের দিকে গিয়ে নিরাপত্তা ডেস্কের পেছনে লুকিয়ে থাকা একজন গার্ড ও আরও একজনকে গুলি করেন। শেষে তিনি ভবনের ৩৩ তলায় একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অফিসে গিয়ে একজনকে হত্যা করেন এবং তারপর নিজেই আত্মহত্যা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তার গাড়ি থেকে একটি রাইফেল কেস, একটি রিভলভার, গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার পর নিউইয়র্ক ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে পার্ক অ্যাভিনিউর ওই অফিস ভবনে পৌঁছান। ভবনটিতে বেশ কিছু নামকরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (NFL) ও আয়ারল্যান্ড কনসুলেটের অফিস রয়েছে।
ভবনের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জেসিকা চেন জানান, তিনি দ্বিতীয় তলায় একটি প্রেজেন্টেশনে অংশ নিচ্ছিলেন, তখন নিচতলা থেকে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান। সবাই মিলে দ্রুত একটি কনফারেন্স রুমে গিয়ে দরজা আটকে ফেলেন। জেসিকা বলেন, “আমরা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। আমি তখনই আমার বাবা-মাকে মেসেজ পাঠিয়ে ভালোবাসার কথা জানাই।”
স্থানীয় টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভবন থেকে মানুষ হাত উঁচু করে নিরাপদে বেরিয়ে আসছেন। ঘটনার সময় পুলিশ বিভাগের দুটি ইউনিট ওই ভবনে অতিরিক্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।
হামলার পর শহরের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা বন্ধ ও গণপরিবহন ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নিউইয়র্কে গুলির ঘটনায় সহিংসতা ও হত্যার হার ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন, এমনটি জানিয়েছে এপি।
১২০ বার পড়া হয়েছে