‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত প্রায় শেষ পর্যায়ে, আজ দলগুলোকে খসড়া হস্তান্তর

সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫ ২:৫৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ বা ‘জুলাই চার্টার’-এর প্রণয়ন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দুই দফা ধারাবাহিক সংলাপ শেষে সনদের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসবে কমিশন এবং খসড়াটি তাদের সরবরাহ করা হবে।
রবিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ১৯তম দিনের বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দলগুলোর মতামত দ্রুত পেলে তা খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই চূড়ান্ত সনদ প্রকাশ করা হবে।
১২ বিষয়ে ঐকমত্য, ৭ বিষয়ে আলোচনা চলমান
আলী রীয়াজ জানান, কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে পূর্ণ ঐকমত্য হয়েছে। আরও ৭টি বিষয়ে আংশিক অগ্রগতি থাকলেও তা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে কমিশনের প্রস্তাব খসড়ায় থাকবে। কোনো দল ভিন্নমত পোষণ করলে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে ঐকমত্য
একজন ব্যক্তি আজীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, দলের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি বলেন, “সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি না থাকলে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না।”
স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে সমঝোতা
রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন ৭৫ বছরের নিচে অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি এবং সদস্যসচিব হবেন ৬২ বছরের নিচে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা। কমিশনে থাকবে ৯ জন সদস্য, যার মধ্যে থাকবেন সরকারি ও বিরোধী পক্ষের সংসদীয় প্রতিনিধিরা, অভিজ্ঞ প্রশাসক, বিচারক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং কমপক্ষে দুইজন নারী সদস্য।
রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে মতবিরোধ
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়ে গেছে। বেশিরভাগ দল সমর্থন দিয়েছে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি” যুক্ত করার পক্ষে। তবে বাহাত্তরের সংবিধান বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান দেখা গেছে।
বামপন্থী দলগুলো চার মূলনীতি (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা) অপরিবর্তিত রেখে নতুন বিষয় যুক্ত করার পক্ষে, অন্যদিকে ডানপন্থী দলগুলো পঞ্চম সংশোধনীতে সংযোজিত “আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস” রাখার পক্ষে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “চার মূলনীতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এগুলো বাতিল করা চলবে না।”
জেএসডি ও এলডিপি নতুন ধারার প্রতি সমর্থন জানালেও বাহাত্তরের মূলনীতিকে অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে উল্লেখ করে।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ আখ্যা দিয়ে নতুন প্রস্তাব সমর্থন করেন।
নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে মতবিরোধ
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল অভিযোগ করেছে, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি সরকার। তারা দাবি করে, আগে জুলাই সনদ প্রকাশ, পরে নির্বাচনী ঘোষণা দিতে হবে।
জামায়াত নেতা এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “নির্বাচনের তারিখ এখনো অনির্দিষ্ট। তৃতীয় বৈঠকেও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি।”
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “সবার সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যাবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করেই আগাতে হবে।”
কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ জুলাই
সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ জুলাই। তার আগেই চূড়ান্ত জুলাই সনদ প্রকাশ ও স্বাক্ষর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ চলছে।
রবিবারের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
১৩৩ বার পড়া হয়েছে