জাতীয়

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫ ২:৪৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
আজ ২৮ জুলাই, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিনটি নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে।

এ বছরের প্রতিপাদ্য—‘আসুন এটি ভেঙে ফেলি’ (Let’s Break It Down)—যার মাধ্যমে হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতনতা, প্রতিরোধ এবং নির্মূলের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অনুমানিত হেপাটাইটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই জানেন না যে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্তদের অনেকেই বিষয়টি জানতে পারেন কেবল রক্তদান বা কোনো জটিল অসুস্থতার সময়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ২-৫ শতাংশ হেপাটাইটিস-বি এবং ১ শতাংশ হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত। লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ এবং লিভার ক্যান্সারের ১৭ শতাংশের পেছনে রয়েছে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস।

গ্লোবোক্যান–এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে ৩,২২৮ জন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ৩,০৬৯ জনের মৃত্যু হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সংক্রমিত।

সরকারি উদ্যোগ
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি খাত, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”

গবেষণার তথ্য ও ঝুঁকি
২০২২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) যৌথভাবে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের হার ১.২৫ গুণ বেশি। যদিও তরুণদের মধ্যে টিকাদানের হার তুলনামূলক বেশি, তবুও মায়ের কাছ থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমণ, অনিরাপদ যৌনাচার ও ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের ফলে সংক্রমণ হারের উচ্চতা রয়ে গেছে।

ডায়ালিসিস নেওয়া কিডনি রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের হার সাধারণ জনগণের তুলনায় বহুগুণ বেশি। গবেষণা অনুযায়ী:

হেপাটাইটিস-সি সংক্রমণের হার: ১০-১৫% (সাধারণ জনগণে ০.৫-১%)
হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণের হার: ২-৬% (সাধারণ জনগণে ৪-৫%)
চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও সচেতনতা
অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ (ASLDB)-এর সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহিনুল আলম বলেন, “হেপাটাইটিস-বির কার্যকর টিকা এবং হেপাটাইটিস-সির সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য ওষুধ এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। তবুও কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে মানুষ চিকিৎসা গ্রহণে পিছিয়ে পড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “স্কুল, কলেজ বা অফিসে একসঙ্গে চলাফেরা কিংবা খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে হেপাটাইটিস ছড়ায় না—এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে।”

ASLDB-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, “লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকা অপরিহার্য। নিরাপদ রক্ত গ্রহণ, জীবাণুমুক্ত অস্ত্রোপচার ও দাঁতের চিকিৎসা, নিরাপদ যৌনাচার এবং মাদকবিরোধী সচেতনতা হেপাটাইটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

তিনি আরও জানান, আক্রান্ত মায়েদের নবজাতককে জন্মের ১২ ঘণ্টার মধ্যে হেপাটাইটিস-বি টিকা দেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদেরও রক্ত পরীক্ষা এবং সচেতনতা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস নির্মূলে শুধু চিকিৎসা নয়, জনসচেতনতা, পরীক্ষার সুযোগ, সময়মতো টিকাদান এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাই হতে পারে প্রকৃত সমাধান।

১১৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন