স্বজন হারানোর বেদনায় স্তব্ধ এক করিডোর, বার্ন ইনস্টিটিউট

রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫ ৬:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মৃত্যুর মিছিল থামছে না।
রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এখন হয়ে উঠেছে স্বজন হারানোর বেদনায় স্তব্ধ এক করিডোর।
বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানিয়েছে, গত দুই দিন ধরে প্রতিদিনই একজন বা একাধিক দগ্ধ শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার সকালে এক ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যু হয়েছে আরও দুইজনের। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে মারা যায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জারিফ ফারহান, আর ১০টা ১৫ মিনিটে মৃত্যু হয় স্কুলের অফিস সহায়ক মাসুমার।
এই নিয়ে পাঁচ দিনের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে।
তবে, চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, অনেকে চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। শনিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে রাফসি (১২) ও আয়ান খান (১২) নামের দুই শিক্ষার্থী।
শোকের ছায়ায় হাসপাতাল করিডোর
শনিবার দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউ ঘুরে দেখা যায়, স্বজনদের ভিড় আগের চেয়ে অনেকটাই কমে এসেছে। কেউ চুপচাপ দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছেন, কেউবা অশ্রুসিক্ত চোখে অপেক্ষা করছেন আরও একটি মৃত্যুসংবাদের আশঙ্কায়।
সেখানেই কথা হয় দশ বছর বয়সী সামিয়া আক্তারের বাবার সঙ্গে। সামিয়া মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া মেয়েটিকে উদ্ধার করেছিলেন তার বাবা রহিম মাহমুদ। তিনি বলেন,
"ঘটনার সময় আমি স্কুলের সামনে মেয়েকে আনতে অপেক্ষা করছিলাম। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে জীবনটা পাল্টে গেল। আমার মেয়েটা দৌঁড় দিতে গিয়ে পড়ে যায়, তখন অনেকেই তার উপর দিয়ে চলে যায়। মাথায়ও আঘাত পেয়েছে। এখনো শ্বাস নিতে কষ্ট হয় ওর।"
রহিম মাহমুদ আরও জানান,
"মাহতাব নামে এক বাচ্চার বাবার সঙ্গে আমি কয়েকদিন ধরে ফ্লোরে শুয়ে থাকতাম। সে খুব আশাবাদী ছিল ছেলেটাকে নিয়ে। কিন্তু ও আর নেই। একে একে সবাই চলে যাচ্ছে।"
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মেহাম্মদ নাসির উদ্দিন শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বর্তমানে ৩৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যাদের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিভিআর ক্যাটাগরিতে (সতর্ক পর্যায়ের রোগী) ৯ জন রয়েছেন, বাকিরা সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
চিকিৎসা কার্যক্রমে সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক চিকিৎসক ও নার্সদের একটি দল ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে ২ চিকিৎসক ও ২ নার্স, সিঙ্গাপুর থেকে ৩ চিকিৎসক ও ২ নার্স এবং চীন থেকে ৩ চিকিৎসকসহ ৬ জন সাপোর্টিং স্টাফ চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করছেন।
পরিচালক জানান, আগামী এক সপ্তাহে আরও ১০ জন রোগীকে ধাপে ধাপে ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
১৩৫ বার পড়া হয়েছে