জাতীয়

বাংলাদেশের আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনাবেচা নিয়ে জটিলতা: কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী?

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫ ৩:৩৬ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) আধুনিক মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (MRCA) কেনার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বহুবার আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও কূটনৈতিক আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে আসে, যখন জানা গেছে, ইউরোপ, রাশিয়া, চীন—সব দিক থেকেই আগ্রহী প্রস্তাব আসলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

যুদ্ধবিমান টেন্ডার, অফার ও বাস্তবতা
২০১৭ সালে বিএএফ ৮+৪টি নতুন যুদ্ধবিমান কেনার টেন্ডার দিলে, রাশিয়া MiG-35 ও Su-30SME অফার করে। ম্যাচিংভাবে ইউরোপীয় ফ্রান্সের Dassault Rafale, ইতালির Eurofighter Typhoon এবং চীনের J-10C নিয়েও বহু আলোচনা হয়। ফ্রান্স ও ইতালি থেকে ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এসে যুদ্ধবিমান উপস্থাপন করেছে, চীন থেকে বাংলাদেশকে ১৬টি J-10C অফার এবং ফিল্ড সার্ভে টিমও পাঠিয়েছে বলে জানা যায়। তবে অফারগুলো কোনোটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

কেন থেমে যাচ্ছে চুক্তি?
বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র বাইরের রাজনৈতিক চাপ নয়, বরং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত জটিলতা, এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা স্তরে টানাপোড়েন—এই তিনই মূলত বড় অন্তরায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘‘যে কোনো যুদ্ধবিমান ডিলের পিছনে সর্বদাইকূটনৈতিক ও টেকনো-ফিনান্সিয়াল ডায়নামিক কাজ করে।’’ ভারতের প্রভাব প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশের সামরিক ক্রয়-প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক রাজনীতি ও জিওপলিটিক্স বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান ফ্লিট ও ঝুঁকি
বর্তমানে বিএএফ পরিচালিত হচ্ছে চীন নির্মিত F-7 ও সীমিতসংখ্যক MiG-29 দিয়ে, যা অপ্রতুল এবং পুরনো। দুর্ঘটনা ও কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে ‘ফ্লাইং কফিন’ অভিধা পাওয়া F-7 ব্যবহারে বিমানের আকস্মিক দুর্ঘটনা বাড়ছে, এবং শক্তি-প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো যেখানে সর্বাধুনিক ফ্ল্যাঙ্কার বা রাফাল আনছে, সেখানে বিএএফ পিছিয়ে পড়ছে—এমন অভিযোগ উঠেছে।

আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে?
বিশ্বের প্রায় সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান (Su-35, Rafale, Typhoon, J-10C) কেনার অফার পেয়েও যেহেতু বারবার চুক্তি হচ্ছে না, বিদেশি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ার বাস্তব ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেক সামরিক বিশ্লেষক।

সামনে কী?
বিএএফ আধুনিকীকরণের সম্ভাব্য নতুন চুক্তি নিয়ে জোরালো আলোচনা চললেও, চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন ছাড়া বাস্তব সফলতা আসছে না। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত সমন্বয়—সব মিলিয়েই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য:
‘‘এটি কেবল রাজনৈতিক চাপ নয়, বরং অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক রাজনীতির বাস্তবতাও সমান দায়ী। দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থেই সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ প্রয়োজন।’’
যুদ্ধবিমান কিনতে বাংলাদেশের সুযোগ থাকলেও, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপে সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হচ্ছে। সামরিক আধুনিকায়ন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে সময়পযোগী পদক্ষেপ আশু প্রয়োজন।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট 

১৭২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন