গাজার নারী অধিকার নিয়ে নেতানিয়াহুর ‘উদ্বেগ’, সমালোচনায় ভণ্ডামির অভিযোগ

শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫ ৬:০৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় নারীদের অধিকার নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।
তবে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, তাঁর এমন বক্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ফুল সেন্ড পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, “গাজার নারীরা দমন-পীড়নের শিকার। তাঁদের কোনো অধিকার নেই, তাঁদের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো কথিত অপরাধ করলে তাঁদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। এটি একেবারেই অযৌক্তিক।”
তিনি আরও বলেন, “গাজার তরুণ-তরুণীরা প্রগতিশীল মূল্যবোধের নামে হামাসকে সমর্থন করছেন, কিন্তু তাঁরা বোঝেন না কী ভালো আর কী মন্দ।” বাইবেলের উদ্ধৃতি টেনে তিনি প্রশ্ন করেন, “তাঁদের কি চোখ নেই দেখতে, কান নেই শুনতে?”
তাঁর এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস, অবরোধ, খাদ্য ও ওষুধের সংকট, এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে লাখো মানুষ চরম দুর্দশায় পড়েছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। এর মধ্যে কেবল রাফা অঞ্চল থেকেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮৬টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুই-তৃতীয়াংশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। মাত্র আটটি হাসপাতাল আংশিকভাবে মাতৃত্বসেবা দিতে পারছে।
নেতানিয়াহুর মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এটিকে ভণ্ডামি এবং ‘দখলদারি নারীবাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
একজন মন্তব্য করেছেন, “নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সময় আপনি তাঁদের ঘরবাড়িতে বোমা ফেলছেন, সন্তানদের না খাইয়ে মারছেন, চিকিৎসাসেবা কেড়ে নিচ্ছেন—এটি ভণ্ডামি নয় তো কী?”
আরেকজন লিখেছেন, “গাজার নারীরা শুধু ভুক্তভোগী নন, তাঁরা শিক্ষিত, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষক, শিল্পী এবং একই সঙ্গে সমাজের চালিকাশক্তি। তাঁদের ‘অসহায়’ হিসেবে চিত্রিত করা অপমানজনক।”
বিশ্লেষকদের মতে, ফিলিস্তিনি নারীরা বহুদিন ধরেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও প্রতিরোধ আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকেছেন। তাঁদের শুধু ‘দমন-পীড়নের শিকার’ হিসেবে দেখানো বাস্তবতা আড়াল করে, ইতিহাসের বিকৃতি ঘটায়।
যেখানে গাজার নারীরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং দিনের পর দিন মানবিক সংকটের মুখে রয়েছেন, সেখানে নেতানিয়াহুর এই ‘সহানুভূতির’ বক্তব্য অনেকের চোখে কৌশলগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই প্রতিভাত হয়েছে।
১৫০ বার পড়া হয়েছে