স্মরণে জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান
মিরপুরে সিএনসি’র ৩৬৪তম সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত

শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫ ৪:২৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অগ্রদূত, জাতির শ্রদ্ধেয় অভিভাবক, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান-এর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার (সিএনসি) আয়োজিত ৩৬৪তম সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর মিরপুরে, ভেনাস টাওয়ার মিলনায়তনে।
বিকাল ৪টা থেকে আয়োজিত এই সাহিত্য আসরে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখিকা ফরিদা হোসেন, যিনি ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের নিকটতম সহচর ও সিএনসি’র গর্বিত উত্তরসূরি।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ফরিদা হোসেন গভীর আবেগে স্মরণ করেন তাঁর শিক্ষক, পথপ্রদর্শক ও প্রিয় স্যারের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যিক দূরদর্শিতা। তিনি বলেন—
“স্যার আমার শিক্ষক, আমার ফিলোসফার। তাঁর হাত ধরেই আমি লেখালেখি ও সাংগঠনিক জীবনে প্রবেশ করেছি। পেন ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রমের নানা দিক তিনি নিজ হাতে আমাকে শিখিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ১৯৯৯ সালে স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পেন কংগ্রেসে আমি প্রথমবারের মতো অংশ নিই। তাঁর মতো মহান মনীষী বাংলা সাহিত্যকে যেভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করে তুলেছিলেন, তা অতুলনীয়।”
তিনি আরও বলেন, “স্যার ছিলেন এক প্রখর স্বপ্নদ্রষ্টা, যাঁর মধ্যে ছিল আলোর দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি। পেন বাংলাদেশ শাখাকে তিনি সন্তানের মতো লালন করে গড়ে তুলেছিলেন এবং মৃত্যুর আগে সেটি আমার হাতে তুলে দিয়ে যান।”
আলোচনায় আরও অংশ নেন ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নাতনি সাহিত্যিক ফরিদামনি শহীদুল্লাহ্। তিনি সৈয়দ আলী আহসানকে উৎসর্গ করে একটি কবিতা পাঠ করেন। তাঁর আবেগঘন উপস্থাপনা সভায় এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।
বিশিষ্ট চিকিৎসক, কবি ও সাহিত্যিক ডা. সুলতানা আহম্মদ সৈয়দ আলী আহসানের বিখ্যাত কবিতা ‘আমার পূর্ব বাংলা এক গুচ্ছ স্নিগ্ধ অন্ধকারের তমাল’ উদ্ধৃত করে বলেন, “এই কবিতাটি আমার এতই প্রিয় যে আজও তা আমি মুখস্থ বলে যেতে পারি।”
স্মরণসভায় নারী লেখক ও কবিদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রাণবন্ত এই সাহিত্য আয়োজনে সঞ্চালনা করেন জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা লাইট হাউজ এর মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, বিশিষ্ট লেখিকা অ্যাডভোকেট শাহানারা স্বপ্না, যিনি তার সুললিত কণ্ঠ ও আবেগঘন উচ্চারণে পুরো অনুষ্ঠানে প্রাণসঞ্চার করেন।
সাহিত্য সভায় স্বরচিত কবিতা ও গল্প পাঠ করেন কবি ও লেখক ডা. সুলতানা আহম্মদ, কবি ও সংগঠক নুরুন্নাহার নীরু, কবি লিন্ডা আমিন, কবি মতিয়ারা আক্তার মিনু, ‘মহীয়সী’ সম্পাদক লেখিকা শারমিন আক্তারসহ আরও অনেকে।
সভাপতি ফরিদা হোসেন উপস্থিত সৃজনশীল লেখকদের সাহিত্য পাঠের উপর সুচিন্তিত ও গভীর মূল্যায়ন প্রদান করেন।
এই সাহিত্য সভা একদিকে যেমন ছিল স্মরণ, তেমনি ছিল নতুন প্রজন্মের সাহিত্যসাধনার প্রতি অনুপ্রেরণার এক দৃষ্টান্ত। অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের সাহিত্যিক উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতায় সিএনসি-এর এ আয়োজন বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।
১৯২ বার পড়া হয়েছে