মাইলস্টোন দুর্ঘটনার ট্রমায় কাঁপছে শিশুমন, পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বৃহস্পতিবার , ২৪ জুলাই, ২০২৫ ২:১০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থী হতাহতের হৃদয়বিদারক ঘটনায় কেঁদে উঠেছে গোটা জাতি।
ঘটনার ভয়াবহতায় শুধু সংশ্লিষ্ট পরিবারের শিশুরাই নয়, সারাদেশের বহু শিশু-কিশোর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকেই ঘুমাতে পারছে না, খেতে পারছে না, কাঁদছে বা চুপচাপ বসে থাকছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বড় কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের পর মানুষ ট্রমায় ভোগে—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ছবি-ভিডিও সবার ওপরই প্রভাব ফেলছে। মাইলস্টোন দুর্ঘটনা দেখে সারাদেশের শিশুরা মানসিকভাবে শকড।”
শিশুদের মাঝে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে?
ঘটনার পর শিশুরা ঘুমাতে পারছে না, খেতে চাচ্ছে না, স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে জানান অনেকে। খেলাধুলা বা স্কুলে যাওয়া থেকেও বিরত থাকতে চাইছে তারা। এসব লক্ষণগুলোই ট্রমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, যা দীর্ঘমেয়াদে পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) এ রূপ নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন ডা. হেলাল।
তিনি বলেন, “শুধু শিশুরা নয়, তাদের বাবা-মাও ট্রমায় পড়তে পারেন। সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে বা দুর্ঘটনার ছবি দেখে অভিভাবকরা এক ধরনের আতঙ্কে ভুগছেন, যা ধীরে ধীরে জটিলতর হয়ে উঠতে পারে।”
ট্রমা কাটাতে করণীয় কী?
ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, শিশুকে ধৈর্য ও ভালোবাসার সঙ্গে সময় দিতে হবে। তাকে একা না রেখে ঘরে কিংবা বাইরে তার পছন্দের কোনো জায়গায় নিয়ে সময় কাটানো জরুরি। “এ সময় বাবা-মা মোবাইল বা অন্য কাজে ব্যস্ত না থেকে সন্তানের সঙ্গে মানসিক যোগাযোগ গড়ে তুলুন।”
বীভৎস কনটেন্ট থেকে দূরে রাখার আহ্বান
বর্তমানে ভিউয়ের আশায় অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর দুর্ঘটনার বীভৎস ভিডিও বা ছবি শেয়ার করেন, যা শিশুদের মানসিক ক্ষতির বড় কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ। এসব কনটেন্ট থেকে শিশুদের দূরে রাখার পাশাপাশি অভিভাবকদেরও এ ধরনের ছবি বা খবর না দেখার পরামর্শ দেন তিনি।
‘মিথ্যা আশ্বাস নয়, সত্য বলুন’
অনেক অভিভাবক শিশুকে শান্ত রাখতে মিথ্যা আশ্বাস দেন—যেমন, ‘তোমার বন্ধু মারা যায়নি, সে ফিরে আসবে।’ কিন্তু এটি শিশুর জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বরং শিশুকে বয়স উপযোগীভাবে সত্য জানানোই শ্রেয়, যাতে সে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।
ধমক বা জোরাজুরি নয়
পড়ালেখা বা ঘুমানোর জন্য জোরাজুরি কিংবা ধমক শিশুকে আরও বেশি মানসিক চাপে ফেলতে পারে। বিশেষ করে ‘তোমার তো কিছু হয়নি, তুমি তো স্কুলে যাও’—এই ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেন ডা. হেলাল। বরং শিশুকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে ধীরে ধীরে উৎসাহিত করতে হবে।
সহানুভূতি ও সহমর্মিতা শেখানো জরুরি
হতাহত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি দেখানো, প্রার্থনা করা কিংবা সহযোগিতা করার সুযোগ শিশুদের দেওয়া যেতে পারে। এতে তারা ট্রমা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা হলেও মানসিকভাবে শক্ত হতে পারবে।
১১৮ বার পড়া হয়েছে